দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কারা | এই প্রতিবন্ধকতার কারণগুলি আলােচনা করাে।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী


দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর সংজ্ঞা দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত, যথা— (১) চিকিৎসাবিজ্ঞানগত বা আইনগত সংজ্ঞা, (২) শিক্ষাগত সংজ্ঞা।


(১) আইনগত সংজ্ঞা (Legal Definition): আমেরিকার মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে যে সংজ্ঞা দিয়েছিল সেটা তো বলা হয়, যে-সমস্ত ব্যক্তির সবচেয়ে ভালো চোখ বা লেন্স ব্যবহারের পরও ভিস্যুয়াল অ্যাকুইটি ২০/২০০ বা তারও কম অথবা ব্যক্তির ভিস্যুয়াল অ্যাকুইটি ২০/২০০-ফুটের বেশি কিংবা ব্যক্তির ভালো চোখের দৃষ্টি ক্ষেত্র ২০ বা এর কম তাদের বলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী।


(২) শিক্ষাগত সংজ্ঞা (Education Definition): সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন হল সেই ব্যক্তি যার দর্শন ক্ষমতা এতটাই ত্রুটিযুক্ত যে, সে স্বাভাবিক প্রদর্শন পদ্ধতিতে পাঠ করতে পারে না। অনেক শিক্ষাবিদের মতে, যারা আইনগতভাবে দৃষ্টিহীন তারা। কার্যক্ষেত্রে সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন নাও হতে পারে। কারণ মানুষের চোখে দু-প্রকার ত্রূটি থাকতে পারে যথাক্রমে— দূরদৃষ্টি (Hyper metropia) ও হ্রদ সৃষ্টি (Myopia) সংক্রান্ত ত্রূটি।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার কারণ সমূহ


দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা কোনো সুস্পষ্ট কারণ বিজ্ঞানীরা উল্লেখ করতে না পারলেও বিভিন্ন গবেষণা ও সমীক্ষায় ফলাফলের ভিত্তিতে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা যায়—


(১) বংশগত কারণ: সমীক্ষায় দেখা গেছে প্রায় ৪২% শতাংশ দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার কারণ বংশগতি অর্থাৎ জিন বাহিত যে বংশগতি নিয়ে শিশু জন্মগ্রহণ করেছে তার ত্রুটি। এ ছাড়া কিছু বংশগত রোগ যেমন—রেটিনোব্লাস্টোমা, জন্মগত ছানি, শৈশবকালীন ছানি ইত্যাদির কারণে শিশু দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হতে পারে। আবার গর্ভবতী মায়ের যদি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, রুবেলা, রেটিনাইটিস প্রভৃতি রোগ থাকে তাহলে শিশুর দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হতে পারে।


(২) চোখের গঠনগত কারণ: চোখের আকৃতি যদি সঠিক না হয়, চোখের মণি যদি অত্যন্ত ছােটো হয়, সঞ্চালনকারী আজ্ঞাবহও সংজ্ঞাবহ স্নায়ু ত্রুটি বা মস্তিষ্কের কোন ত্রুটির কারণে শিশু দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হতে পারে।


(৩) সাধারণ কারণ: দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা সাধারণ কারণগুলোকে প্রধানত তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করে আলােচনা করা হল

  • জন্মের পূর্বের কারণ : শিশুর জন্মের আগে গর্ভবতী মা যদি বিভিন্ন সংক্রামক রোগের (রুবেলা, সিফিলিস, গুটি বসন্ত, গনোরিয়া প্রভৃতি) আক্রান্ত হন, মায়ের বয়স যদি অত্যন্ত কম হয়, গর্ভবতী মা যদি অপুষ্টিতে ভোগেন, মায়ের যদি রক্তের শ্রেণিগত ত্রুটি থাকে, মা যদি মাদক সেবন করেন অথবা গর্ভবতী মায়ের যদি তলপেটে কোনাে আঘাত লাগে তাহলে শিশু দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হতে পারে।
  • জন্মকালীন কারন : জন্মের সময় শিশুর গলায় নাড়ি পেঁচিয়ে অক্সিজেনের ঘাটতি যদি হয়, ফরসেপের আঘাত যদি চোখে লাগে, সংক্রামক ব্যাধিতে যদি আক্রান্ত হয় অথবা জন্মের সময় শিশু যদি হাত ফসকে মেঝেতে পড়ে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট জায়গায় আঘাত লাগে তাহলে শিশু দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হতে পারে।


(৪) সাধারণ চক্ষুরোগ: সাধারণ কিছু চোখের রোগ যেমন- ট্র্যাকোমা, কনজাংটিভাইটিস, অপথ্যালমিয়া, নিওনেটোরাম, কেরাটাইটিস, গ্লুকোমা, জেরপথ্যালমিয়া, ছানি ইত্যাদির কারণে শিশু দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হতে পারে।


(৫) অন্যান্য কারণ: পিতা-মাতার রক্তের ত্রুটি, শিশুর স্বাভাবিকের থেকে কম ওজন, জন্মকালীন শিশুর সংক্রমণ যেমন কনজাংটিভাইটিস, কর্নিয়া আলসার হলে, দুর্ঘটনাজনিত কারণে মস্তিষ্কে ও চোখে আঘাত লাগলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হতে পারে।


প্রতিবন্ধী কাদের বলা হয়? প্রতিবন্ধী শিশুদের শ্রেণিবিন্যাস করো।


ভিন্ন সক্ষমতা সম্পন্ন শিশু কাদের বলে? এই ধরনের শিশু সম্পর্কে আধুনিক ব্যাখ্যা দাও।


প্রতিবন্ধী শিশুদের বিশেষ শিক্ষার প্রয়ােজন কেন হয়।