প্রাক-শৈশব এবং প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার পুনর্গঠন সম্পর্কে জাতীয় শিক্ষানীতির মূল বিচার্য বিষয় | প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে জাতীয় শিক্ষানীতির সুপারিশ গুলি লেখ।
জাতীয় শিক্ষানীতির পঞ্চম অংশ প্রাক-শৈশব এবং প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার পুনর্গঠন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
প্রাক-শৈশব শিক্ষার পুনর্গঠন সম্পর্কে জাতীয় শিক্ষানীতির বক্তব্য
আমাদের জাতীয় শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হল প্রত্যেক শিশুর সামগ্রিক বিকাশে সহায়তা করা। অর্থাৎ পুষ্টি, স্বাস্থ্য, মানসিক, সামাজিক, প্রাক্ষোভিক, নৈতিক প্রভৃতি দিকগুলির যথাযথ বিকাশের জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এই কর্মসূচিটি হল— ECCE বা Early Childhood Care and Education.
শিশুকল্যাণ ও শিক্ষা ১৯৮৬-এর সম্পর্কে জাতীয় শিক্ষানীতি
(১) শিক্ষায় প্রথম অংশগ্রহণকারীদের অগ্রাধিকার : শিশু সংক্রান্ত জাতীয় শিক্ষা নীতি শিশুদের উন্নয়নে বিনিয়োগের উপর গুরুত্ব আরোপ করে। যেমন— শিক্ষা খরচ স্কলারশিপ ইত্যাদি প্রদানের ব্যবস্থা। শিশুদের মধ্যে আবার যেসব পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বংশধররা শিক্ষায় প্রথম অংশগ্রহণ করছে বা শিক্ষার সূচনা করেছে। প্রথম তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
(২) পুষ্টি, স্বাস্থ্য সম্বন্ধীয় : পুষ্টি, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক, মানসিক, শারীরিক, নৈতিক ও প্রাক্ষোভিক উন্নয়ন ইত্যাদি মৌলিক বিষয়কে স্বীকৃতি জানিয়ে ECCE সংস্থা (Early Childhood Care and Education) সুসংহত শিশু কল্যাণকে কর্মসূচি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রয়োগ করলে। এই সমস্যার সহায়ক হিসেবে দৈনন্দিন কর্ম কেন্দ্রগুলো সর্বজনীন প্রাসঙ্গিক শিক্ষার রূপায়ণে যেমন কাজ করবে তেমনি পারিবারিক কর্মে নিযুক্ত বালিকা এবং গরিব পরিবারের নারীদের সময় ও সুযোগ অনুসারে শিক্ষার ব্যবস্থা করবে।
(৩) ECCE কর্মতালিকা : ECCE-এর কর্মতালিকা হবে শিশুকেন্দ্রিক। শিশুর ব্যক্তিত্বের বিকাশ, ইচ্ছার প্রকাশ ইত্যাদির দিকে লক্ষ রেখে খেলার ছলে শিক্ষা দেওয়া হবে।
(৪) প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার সঠিক রূপায়ন : সাধারণভাবে মানবসম্পদ বিকাশের প্রতি লক্ষ্য নির্দেশ করে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাগ্রহণে সক্ষম ও অনুপ্রাণিত করার তাৎক্ষণিক উদ্দেশ্য নিয়ে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাক্রম কি সঠিক ও সুষ্ঠু উপায়ে রূপায়ণ করতে হবে। শিশুর উন্নয়ন প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্য কর্মসূচিকে শক্তিমান করে তুলতে হবে।
(৫) ICDS : শিশুর মানসিক, শারীরিক, প্রাক্ষোভিক ইত্যাদি বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়েছে সুসংহত শিশু বিকাশ কর্মসূচি বা ICDS (Integrated Child Development Scheme)-এর সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে।
প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার পুনর্গঠন সম্পর্কে জাতীয় শিক্ষানীতির বক্তব্য
(১) শিশুকে স্বাগত জানানো : শিশুকে বিদ্যালয়ে আনা ও শিক্ষালাভে অনুপ্রাণিত করার প্রয়োজন এটা সকলের পক্ষ থেকে আন্তরিকতার সঙ্গে স্বীকার করতে হবে এবং তাদেরকে এই কাজে ব্রতী করার জন্য আয় আহ্বানে উৎসাহিত করতে হবে।
(২) শিশু কেন্দ্রিক বৃত্তিমুখী শিক্ষা : এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক স্তরে শিশুকেন্দ্রিক এবং কর্ম ভিত্তিক শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা উচিত।
(৩) শিক্ষালাভে অগ্রাধিকার : প্রথম বংশধর হিসেবে শিক্ষালাভে নিয়োজিত শিক্ষার্থীদের জন্য সংশোধনী ব্যবস্থাপনার সাহায্য নেওয়া প্রয়ােজন। এই সমস্ত শিশু যত বড়াে হতে থাকবে ততই তাদেরকে গুণগত শিক্ষণের বিষয় প্রদান করা উচিত এবং অনুশীলনের মাধ্যমে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
(৪) একই শ্রেণিতে আবদ্ধকরণ বিলুপ্তি ঘটানো : পরীক্ষায় বিফলতার দরুন একই শ্রেণিতে আবদ্ধ রাখার ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ মুছে দিয়ে মূল্যায়ন ব্যবস্থাকে কার্যকর করার দিকে গুরুত্ব আরোপ করা হবে।
(৫) শাস্তিপ্রথা বাতিল করা : শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে শারীরিক শাস্তির বিষয়টিকে দৃঢ়তার সঙ্গে নাকচ করতে হবে।
(৬) শিক্ষার সময় নির্ধারণ : শিশুদের শিক্ষার সময়টাকে তাদেরই পারিপার্শ্বিক অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারণ করতে হবে।
(৭) বিধিবহির্ভূত ধারাবাহিক শিক্ষা : বিদ্যালয় ছুট, কর্মরত, বিদ্যালয়বিহীন অণ্ডলের শিশুরা এবং যেসকল মেয়েরা বিদ্যালয়ে যেতে পারে না, তাদের জন্য বিধিবহির্ভূত শিক্ষার প্রচলন করতে হবে।
(৮) বিধি মুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থাপনা : পঞ্চায়েত, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এই শিক্ষা পরিচালিত হবে। শিক্ষা কেন্দ্র গুলির আধুনিক প্রযুক্তি সহায়ক উপকরণ দ্বারা পড়ানো হবে।
(৯) সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা : প্রাথমিক স্তরে দুটি বিষয় উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে - (a) ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত সকল ছেলে মেয়েদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করা, যাতে তারা প্রাথমিক শিক্ষা সম্পূর্ণ করতে পারে সে ব্যাপারে নিশ্চিত করার। (b) প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করা।
এই উদ্দেশ্য পূরণের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে যথোপযুক্ত সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে এবং নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। তাই প্রাথমিক শিক্ষার পুনর্গঠনের জন্য অপারেশন ব্ল্যাকবোর্ড কর্মসূচি চালু করা হয়েছে।
(১০) অপারেশন ব্ল্যাকবোর্ড : জাতীয় শিক্ষানীতি (১৯৮৬ খ্রিঃ.)-র একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ হল অপারেশন ব্ল্যাকবোর্ড কর্মসূচি। জাতীয় শিক্ষানীতি (১৯৮৬ খ্রিঃ.) বলা হয়েছে, সমগ্র দেশের প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য কিছু কর্মসূচি বা প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। এখানে ব্ল্যাকবোর্ড শব্দটি প্রতীকী হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ব্ল্যাকবোর্ড শব্দটির দ্বারা প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা সহায়ক সব ধরনের উপাদানকে বোঝানোর হয়েছে। এই কর্মসূচিকে বলা হয় অপারেশন ব্ল্যাকবোর্ড।