বিকলাঙ্গ শিশু কাদের বলে | বিকলাঙ্গ শিশুদের শ্রেণীবিন্যাস করে।

বিকলাঙ্গ শিশু

যে সকল শিশু জন্মগত কারণে বা আকস্মিক কোনো দুর্ঘটনায় কোনো অঙ্গ বা ইন্দ্রিয় হারিয়েছে, যে কারণে তারা স্বাভাবিক শিশুদের মতো জীবন যাপন করতে পারে না তাদেরকে বলে বিকলাঙ্গ শিশু, যেমন- পক্ষাঘাতগ্রস্ত, অঙ্গাহানিগ্রস্ত। বিকলাঙ্গতা বােঝাতে ইংরেজিতে বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার করা হয়, যেমন- Crippled, Locomotor Handicapped, Neuromuscular Disorder.

(১) Crippled : যাদের কোনাে দুর্ঘটনা জনিত কারণে কিংবা অসুস্থতার কারণে হাঁটবার অসুবিধা হয়।

(২) Locomotor Handicapped : যাদের নিম্নাঙ্গ অথবা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যার কারণে চলতে ফিরতে অসুবিধা হয়, এক্ষেত্রে একটি পা বা দুটি পা উভয়ে সমস্যা তৈরি হয়।

(৩) Neuromuscular Disorder : স্নায়বিক সমস্যার কারণে এই ধরনের বিকলাঙ্গ দেখা যায়।

বিকলাঙ্গ শিশুর শ্রেণিবিন্যাস

(১) জ্ঞানেন্দ্রিয় জনিত ত্রুটি: চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা ও ত্বক মিলে আমাদের জ্ঞানেন্দ্রিয়। এর মধ্যে কোনাে একটি ত্রুটিজনিত কারণে বিকলাঙ্গ হয়।

(২) কর্মেন্দ্রিয় জনিত ত্রুটি : যে সকল অঙ্গ, ইন্দ্রিয় মানুষের বিভিন্ন কাজকর্ম করতে সাহায্য করে, তাদের বলে কর্মেন্দ্রিয়। এই কর্মেন্দ্রিয় কোনো ত্রুটি হলে তাকে কর্মেন্দ্রিয় জনিত ত্রুটি বলে। যেমন— স্নায়বিক ত্রুটি, হৃদ্যন্ত্রের ত্রুটি, শ্বাসযন্ত্রের ত্রুটি, চলনে ত্রুটি।

(৩) বাগযন্ত্রের ত্রুটি : স্বরতন্ত্রী, জিহ্বা ও ওষ্ঠে কোনো সমস্যা হবে কথা বলার বিভিন্ন সমস্যা হয়। এই সংক্রান্ত ত্রুটিকে বলে বাগযন্ত্রের তুটি। বাগযন্ত্রের ত্রুটির কারণে বিকলাঙ্গ হয়।

বিকলাঙ্গ শিশুদের জন্য বিশেষ শিক্ষা প্রয়োজনীয়তা

(১) শিক্ষার্থীর সামগ্রিক চাহিদা পূরণে সহায়তা : প্রতিবন্ধী শিশুদের অ স্বাভাবিক শিশুদের মতো শারীরিক, মানসিক, প্রাক্ষোভিক চাহিদা লক্ষ করা যায়। তার প্রতিবন্ধী শিশুদের এই সমস্ত চাহিদা নিরসনের জন্য বিশেষ শিক্ষার প্রয়োজন হয়।

(২) হীনমন্যতা দূরীকরণ ও আত্মবিশ্বাস জাগরণে সহায়তা : প্রতিবন্ধী শিশুরা তাদের প্রতিবন্ধকতার জন্য সবসময় হীনমন্যতায় ভুগতে থাকে। তাই তাদের উপযুক্ত শিক্ষার দ্বারা আত্মবিশ্বাসী করে ভােলা প্রয়োজন। তাই তাদেরকে সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য বিশেষ শিক্ষার প্রয়োজন।

(৩) আত্মবিশ্বাস জাগানো : প্রতিবন্ধী শিশুরা যেহেতু অন্যান্য স্বাভাবিক শিশুর মতো স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারে না, পরনির্ভরশীল হয়ে থাকতে হয় তাই তারা হীনমন্যতায় ভোগে। নিজেকে সংকুচিত করে রাখে। ফলে তারা যেটুকু কাজ করতে পারত সেটুকু করারও ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তাই এদের শিক্ষার উদ্দেশ্য হল আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলা। সেই পারবে’ এই বোধ জাগিয়ে তোলা।

(৪) বিশেষ ক্ষমতার ব্যবহারে সহায়তা : কোনাে একটি দিকে প্রতিবন্ধী শিশুদের অধিক ক্ষমতার পরিচয় পেলে ভবিষ্যৎ জীবনে রুজিরােজগারের জন্য যে বিশেষ দিকটির বিকাশের জন্য বিশেষ শিক্ষা প্রয়োজন।

(৫) দৈনন্দিন জীবন যাপনে সহায়তার : দৈনন্দিন জীবনের বিশেষ প্রয়োজনীয় কাজগুলোর জন্য যাতে অন্যের উপর নির্ভর করে না হয়, নিজের কাজ যাতে নিজেই করতে পারে সেই উপযােগী শিখন কৌশল শেখানাে এই শিক্ষার বিশেষ উদ্দেশ্য। খুব ছােটো থেকেই এই কৌশল শেখালে দৈনন্দিন জীবনে তারা প্রায় স্বাভাবিক মানুষের মতা কাজকর্ম স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে।

(৬) যথাযোগ্য মনোভাব গঠন করা : এই শিক্ষার একটি বিশেষ উদ্দেশ্য হল প্রতিবন্ধী শিশুদের যথাযোগ্য মনোভাব গঠনে সাহায্য করে। তারা সমাজের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, চেষ্টা করলে তারা সব প্রতিবন্ধকতাকে জয় করতে পারে এই মনোভাব তৈরি করা। এই শিক্ষা শিশুকে উপযুক্ত মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

(৭) বৃত্তিমুখী প্রশিক্ষণ দান : এই শিক্ষা শিশুকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার শিক্ষা দান করবে। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হলে মানসিকভাবে সে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে‌।

(৮) জ্ঞান অর্জনে সহায়তা : এই শিক্ষা শিশুদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জনে সাহায্য করবে। এতে তাদের উন্নত চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটবে।

(৯) বিভিন্ন সালনমূলক দক্ষতার বিকাশ : প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের প্রতিবন্ধকতার ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন সঞ্চালনমূলক দক্ষতার বিকাশ ঘটানাে এই শিক্ষার বিশেষ উদ্দেশ্য। এ ছাড়া প্রাক্ষোভিক বিকাশ, শারীরিক বিকাশ, মানসিক বিকাশ, ভাষার বিকাশ প্রভৃতি যাতে যথাযথভাবে ঘটে সে বিষয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ফলে সে তার প্রতিবন্ধকতাকে সহজেই জয় করতে সক্ষম হবে।

(১০) মানসিক চাহিদার পরিতৃপ্তি : প্রত্যেক শিশুর মধ্যে মানসিক চাহিদা আছে। প্রতিবন্ধী শিশু তার ব্যতিক্রম নয়। তাই সুস্থ মানসিক বিকাশের জন্য শিক্ষার দরকার।

(১১) প্রক্ষোভিক বিকাশ : দৈহিক ত্রুটির জন্য তারা স্বাভাবিক প্রাক্ষোভিক আচরণ করে। এই ধরনের শিশুরা ভীষণ আবেগতাড়িত হয়। তাদের আবেগ ও অনুভূতির সঠিক বিকাশের জন্য শিক্ষার প্রয়োজন।
 
উল্লিখিত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় প্রতিবন্ধী শিশুদের বিশেষ শিক্ষার প্রয়োজন আছে। এদের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করলে দেশ তথা সমাজ পিছিয়ে পড়বে। নানান সমস্যা দেখা দেবে। দেশের উন্নতি ব্যাহত হবে। তাই এদেরকে যত্নসহকারে আপন ভেবে শিক্ষার  প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে।