প্রাথমিক শিক্ষা সমস্যাগুলির সমাধান সম্পর্কে আলােচনা করাে।

প্রাথমিক শিক্ষা সমস্যাগুলির সমাধান

প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে যে সকল সমস্যা হয়েছে, সেগুলো সমাধানের জন্য যে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় সেগুলি হল—

(১) বিদ্যালয়ের সংখ্যাবৃদ্ধি: ভারতবর্ষের জনসংখ্যাবৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতি এক বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে একটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যাতে সবাই বিদ্যালয়ে যেতে পারে।

(২) সাংবিধানিক নির্দেশিকা অগ্রাধিকার প্রদান : সংবিধানের নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষার ব্যাপারে যেসকল বক্তব্য রাখা হয়েছে তার যথাক্রমে বাস্তবসম্মত প্রয়োগ।

(৩) আর্থিক বরাদ্দ বৃদ্ধি : প্রাথমিক শিক্ষার জন্য সরকারি বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে, যা এই শিক্ষার গুণগত ও পরিমাণগত মান বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।

(৪) আকর্ষণীয় পাঠক্রম : প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রমের আকর্ষণীয় করতে হবে। কারণ এই পাঠক্রম শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করবে, উদ্দীপিত করবে এবং শিক্ষার্থী এটি গ্রহণে আগ্রহী হবে। অর্থাৎ বাস্তব জীবনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রম রচনা করতে হবে।

(৫) সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর গুরুত্ব বৃদ্ধি : এই শিক্ষার পাঠক্রমকে আকর্ষণীয় করে তুলতে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ধরনের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির ব্যবস্থা রাখতে হবে। যেমন—ছবি আঁকা, নাচ, গান, পোস্টার তৈরি, খেলাধুলা ইত্যাদি।

(৬) শিক্ষার্থীদের উৎসাহ প্রদান : প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ প্রদান করা প্রয়োজন। তারা সাথে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

(৭) অভিভাবকদের উৎসাহ প্রদান : অভিভাবকদের সাথে প্রাথমিক শিক্ষাযােগ্য শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করে এবং সে বিষয়ে সক্রিয় হয়, সে সম্পর্কে তাদের অবহিত করতে হবে, উৎসাহ দিতে হবে।

(৮) প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ : একজন উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকই পারেন ছাত্রের সবচেয়ে বেশি উদ্দীপ্ত করতে, চাই তাদের সঠিক জ্ঞান ও সঠিক শিক্ষাই শিক্ষার্থীদের আদর্শ ব্যক্তিতে পরিণত করতে পারবে।

(৯) বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ : বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক ও অন্যান্য উপকরণ যদি বিদ্যালয় থেকে দেওয়া যায়, তাহলে দরিদ্র ঘরের পিতা-মাতা উৎসাহী হবেন। তাদের ছেলে মেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে উৎসাহী হবেন।

(১০) পরিকাঠামোগত সংস্কার : শুধু বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠান নয়, তার সঙ্গে পরিকাঠামোগত প্রয়োজনীয়তাগুলি দিকে নজর দিতে হবে। যেমন- আলো-বাতাস যুক্ত শ্রেণিকক্ষের, আসবাবপত্র ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।

(১১) অপচয় ও অনুন্নয়ন রোধ : প্রাথমিক শিক্ষার এরূপ সমস্যাকে দূর করতে প্রয়োজনীয় সরকারি ব্যবস্থা নিতে হবে।

(১২) পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে : পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করতে হবে, যাতে পরিবহনের অভাবে শিখন-শিক্ষণ কোন দিকে পিছিয়ে না পড়ে, সেদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে হবে।

(১৩) মিড-ডে মিলের ব্যবস্থা করা : আমাদের মতো দরিদ্র দেশে বেশিরভাগ শিশু দু-বেলা খেতে পারে না। তাই তারা খাবার সংস্থানের চিন্তায় পড়াশোনা মূল্যহীন মনে করে বিদ্যালয়মুখী হয় না। এই অসুবিধা দূর করার জন্য বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিলের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

(১৪) শিশুশ্রম আইন প্রয়োগ করা : সরকার শিশুশ্রম রােধ করার জন্য যে আইন তৈরি করেছিল তা যাতে বাস্তবে প্রয়োগ করা হয়, তা দেখা। তবেই অভিভাবকরা সচেতন হবে এবং প্রাথমিক শিক্ষার প্রসার ঘটবে।

(১৫) নিয়মিত বিদ্যালয় পরিদর্শন : সরকার থেকে নিয়মিতভাবে বিদ্যালয় পরিদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ যথাযথ ও নিয়মিত পরিদর্শন ব্যবস্থা থাকলে বিদ্যালয়ের পঠন পাঠন গতিশীল হবে।

সুতরাং সবশেষে বলা যায় যে, উপরোক্ত ব্যবস্থাগুলি যদি সরকারিভাবে নেওয়া যায়, তাহলে এই সমস্যাগুলির যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।