সমস্যামূলক আচরণ সংশোধনের উদ্দেশ্যে ক্রীড়া ভিত্তিক চিকিৎসা সম্পর্কে আলােচনা করাে।

ক্রীড়া ভিত্তিক চিকিৎসা

শিশুর আচরণ সংশোধনের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। শিশুরা ভাষার মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে না। প্রাক্ষোভিক অসঙ্গতি দেখা দিলে তা আচরণের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। অভিভাবক আচরণ সংশোধনের জন্য শিশু মনস্তত্ত্বের কাছে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে নানারকম খেলনা ও পুতুল দেন। সমস্যার প্রকৃতি অনুযায়ী তার খেলার ধরন চিকিৎসক লক্ষ করেন। শিশুদের খেলনা প্রকৃতি, খেলনার ব্যবহার, তার মনােযােগ, বিশেষ কোন্ খেলনাটি তার পছন্দ বা অপছন্দ ইত্যাদির মাধ্যমে শিশুর মনের অন্তর্দ্বন্দ্বের প্রকাশ ঘটে। তার এই আচরণ মনোচিকিৎসক লক্ষ করেন। এইভাবে খেলার মধ্য দিয়ে শিশুর অবদমিত রাগ, ভয়, আক্রমণাত্মক মনোভাব দূর হয় এবং শিশু প্রাক্ষোভিক ভারসাম্য ফিরে পায়। একে খেলার মাধ্যমে বিরােচন (Catharsis) বলে। মনোচিকিৎসক শিশুর খেলনা প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে তার সমস্যার কারণ বুঝে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করেন।

ফ্রয়েড-কন্যা আনা ফ্রয়েড খেলার মধ্য দিয়ে শিশুর প্রাক্ষোভিক সমস্যা দূর করার কথা বলেছেন। মনোবিদ মেলানি ক্লেইল (Melanie Klein) এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে সাফল্য অর্জন করেছেন।

শিশুর বিকাশ অনুযায়ী খেলা চার রকমের দেখা যায়— 
  • (১) অঙ্গ সঞ্চালনমূলক খেলা, 
  • (২) কল্পনামূলক খেলা, 
  • (৩)  অনুকরণমূলক খেলা এবং 
  • (৪) স্বপ্নচারিতামূলক খেলা।

সুস্থ ও স্বাভাবিক শিশুর সব পর্যায়ের খেলা গুলো পেলে তার সুস্থ ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে। কিন্তু যে সকল শিশু সুস্থভাবে খেলার সুযোগ পায় না তাদের প্রাক্ষোভিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং তার আচরণগত সমস্যা দেখা যায়। ক্রীড়া ভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি কতগুলো পর্যায় আছে।

(১) তথ্যসংগ্রহ: এই পর্যায়ে মনশ্চিকিৎসক শিশু এবং তার পরিবারের সঙ্গে পরিচিত হয়ে শিশু সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য যেমন—তার দৈহিক ও মানসিক সংগঠন, বংশগতি, পরিবেশ ইত্যাদি সম্পর্কে পরিচিত হবেন।

(২) খেলার ধরন অনুসন্ধান : শিশুকে বিভিন্ন রকম খেলনা সামগ্রী দিয়ে দেখতে হবে, কোনটি তার পছন্দের। তার খেলনার সামগ্রী ও খেলাধুলার ধরন বয়স অনুযায়ী কি না।

(৩) মানসিক সুস্থতার প্রকৃতি নির্ধারণ : এই পর্যায়ে দেখতে হবে তার কোন ধরনের খেলনা সামগ্রী পছন্দ। খেলার সময় তার বিভিন্ন আচরণ ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে দেখতে হবে। এইভাবে চিকিৎসক শিশুর মানসিক অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণ অনুসন্ধান করতে পারবেন।

(৪) মানসিক দ্বন্দ্বের কারণ উদ্ঘাটন : শিশুর অবদমিত আবেগ এইভাবে খেলার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায় ফলে শিশু স্বাভাবিক প্রাক্ষোভিক ভারসাম্য ফিরে পাবে ও মনশ্চিকিৎসক শিশুকে স্বাভাবিক করে তুলতে সক্ষম হবেন। এই পদ্ধতিতে শিশুর আচরণ পর্যবেক্ষণ করে, মানসিক দ্বন্দ্বের কারণে জেনে, তার চিকিৎসা করে আচরণের পরিবর্তন ঘটাবেন।

উপরে আলােচিত এইসকল পর্যায়ের মাধ্যমে শিশুমনস্তত্ত্ব বুঝে তার চিকিৎসা সম্ভব। শিশুর আচরণের পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব।