সর্বশিক্ষা অভিযানে পশ্চিমবঙ্গের উদ্যোগ ব্যক্ত করো।

পশ্চিমবঙ্গের মোট জনসংখ্যার এক সিংহভাগ নিরক্ষরতার অন্ধকারে নিমজ্জিত তা সর্বশিক্ষা অভিযানের পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করতে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে।

উদ্যোগ: সর্বশিক্ষা অভিযান কর্মসূচি পশ্চিমবঙ্গের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা হল -

(১) বিকল্প বিদ্যালয় গঠন :

(a) ৬-১৪ বছর বয়সের সকল শিশুকে ২০০৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে প্রথাগত বিদ্যালয়ে বিকল্প অথবা পরিপূরক বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে হবে।

(b) ২০০৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সকল শিশুর চতুর্থ শ্রেণি (IV) পর্যন্ত শিক্ষা গ্রহণ নিশ্চিত করা।

(c) ২০১০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে, যাতে অষ্টম শ্রেণি (vii) পর্যন্ত প্রারম্ভিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে তার ব্যবস্থা করা।

(d) ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে যে সকল শিশু বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল তারা যাতে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যালয় ছেড়ে না যায়, তা সুনিশ্চিত করা।

(e) এই ব্যাপারে কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়কেই যৌথভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

(২) স্কুল চলো কর্মসূচি : এই কর্মসূচিকে আরও কার্যকর করার জন্য সরকার স্কুল চলো’ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

(৩) সবুজ কার্ড বিতরণ : সরকার সবুজ কার্ড বিতরণ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এই কর্মসূচিতে গ্রাম কমিটি ও শিক্ষকগণ প্রতিটি গ্রামের ঘরে ঘরে গিয়ে যারা স্কুলে যায়নি এমন ছেলেমেয়েদের চিহ্নিত করে এবং অভিভাবকদের বলে, ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে। এজন্য তারা বিশেষ দিনে সবুজ কার্ড বিতরণ করেন। অভিভাবকদের সচেতন করেন, শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেন। এই কর্মসূচিতে বেশ কিছু সংখ্যক ছেলে মেয়ে স্কুলমুখী করতে গেছে।

(৪) শিশু শিক্ষাকেন্দ্র গঠন : পশ্চিমবঙ্গের সরকারি প্রচেষ্টায় বহু শিশু শিক্ষা কেন্দ্র (১৬০৪৯টি প্রায়) প্রায় ১২ লক্ষ শিশু শিক্ষা গ্রহণ করছে। কলকাতায় বেসরকারি প্রচেষ্টায় ৩৯৫ টি শিশু শিক্ষা কেন্দ্র প্রায় ২৩,০০০ শিশু, শিক্ষা গ্রহণ করছে।

(৫) বিশেষ সুযোগ সুবিধা : বিনামূল্যে পুস্তক, স্কুল ইউনিফর্ম বিতরণ-সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

(৬) কর্মসূচি রূপায়ণ : পশ্চিমবঙ্গে এই কর্মসূচি রূপায়ণের জন্য গঠিত হয়েছে প্রারম্ভিক শিক্ষা উন্নয়ন সংস্থা। এই সংস্থার সভাপতি হলেন রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী, কার্যকরী সভাপতি হলেন বিদ্যালয় শিক্ষা বিভাগের মন্ত্রী এবং সহ-সভাপতি হলেন বিদ্যালয় শিক্ষা বিভাগের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

জেলা স্তরের কর্মসূচি রূপায়ণের জন্য গঠিত হয়েছে জেলা সর্বশিক্ষা অভিযান কমিটি। এই কমিটির সভাপতি হলেন জেলা সভাধিপতি এবং কার্যকরী সভাপতি হলেন জেলা সমাহর্তা। জেলা সভাপতি হলেন শিক্ষা বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ।

পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে সর্বশিক্ষা অভিযান কর্মসূচি দেখাশোনা করে পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী শিক্ষা দপ্তর এবং গ্রামসভার ক্ষেত্রে গ্রামসভা শিক্ষা কমিটি।

রাজ্য স্তর থেকে গ্রামসভা স্তর পর্যন্ত বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে সর্বশিক্ষা অভিযান প্রকল্পটি পরিচালিত হয়ে থাকে। রাজ্য স্তরের সংস্থাটির নাম হল প্রারম্ভিক শিক্ষা উন্নয়ন সংস্থা, জেলা স্তরের নাম হল—জেলা প্রকল্প দপ্তর। পঞ্চায়েত স্তরে সংস্থাটির নাম হল চক্র সম্পদ কেন্দ্র (Circle Resource Centre) এবং গ্রাম সভার ক্ষেত্রে এর নাম গুচ্ছ সম্পদ কেন্দ্র। প্রত্যেক সংস্থার স্থানীয় প্রয়োজন ও গুরুত্ব অনুসারে কর্মসূচির পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করার স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। তবে সর্বশিক্ষা অভিযান কর্মসূচি তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সরকারি, বেসরকারি ও স্থানীয় জনগণের মধ্যে সুষ্ঠু সমন্বয় ও সহযোগিতার প্রয়োজন।