সাধারণ শিক্ষা ও বৃত্তিমুখী শিক্ষার মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করো এবং এই দুই ধরনের শিক্ষার মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করো।

সাধারণ ধর্মীয় শিক্ষা ও বৃত্তিমুখী শিক্ষা, শিক্ষা ব্যবস্থার অন্তর্গত একটি পরস্পরবিরোধী ধারণা। উভয় প্রকার শিক্ষার উদ্দেশ্য, পাঠক্রম, শিক্ষণ পদ্ধতি, শিক্ষা উপকরণ প্রভৃতি সকল কিছুই সম্পূর্ণ পৃথক পরস্পরের থেকে। যদিও আধুনিক শিক্ষা সম্পূর্ণতা লাভ করে এই দুই প্রকার শিক্ষা কাঠামোর সমন্বয়ে, তবুও কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্রে উভয় প্রকার শিক্ষার মধ্যে পার্থক্য লক্ষ করা যায়।

সাধারণ শিক্ষা ও বৃত্তিমুখী শিক্ষার মধ্যে পার্থক্য

সাধারণ শিক্ষা :

(১) যে শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তির নৈতিক, চারিত্রিক, আধ্যাত্মিক, নান্দনিক, সামাজিক প্রভৃতি সমস্ত দিকের বিকাশ হয়; তাকে সাধারণ শিক্ষা বলে।
(২) সাধারণ ধর্মীয় শিক্ষার ক্ষেত্র অত্যন্ত ব্যাপক ও বিস্তৃত।
(৩) সাধারণ ধর্মীয় শিক্ষা সর্বজনীন।
(৪) সাধারণ ধর্মীয় শিক্ষার পাঠ্যক্রম সরল প্রকৃতির ও সকলের ক্ষেত্রে কিভাবে প্রযোজ্য।
(৫) সাধারণ শিক্ষায় কেবল পুথিগত তাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জনের উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়।
(৬) সাধারণ শিক্ষার উদ্দেশ্য হল শিশুকে মানবিক গুণসম্পন্ন করে তোলা এবং তার ব্যক্তিত্বের বিকাশে সাহায্য করা।
(৭) সাধারণ ধর্মীয় শিক্ষা সমাজতান্ত্রিক আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত।
(৮) সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও নিজস্বতা প্রকাশের সুযোগ থাকে কম।
(৯) সাধারণ ধর্মীয় শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যয়ভার তুলনামূলকভাবে কম।
(১০) সাধারণ শিক্ষার শেষে শিক্ষার্থীরা BA, BSc, BCom ইত্যাদি ডিগ্রি লাভ করে থাকে।
(১১) শিক্ষার্থী সাধারণ ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক নাগরিকতার বৈশিষ্ট্যগুলি অর্জন করতে পারে।

বৃত্তিমুখী শিক্ষা :

(১) যে শিক্ষায় কোনাে বিশেষ বৃত্তি সম্পর্কে শিক্ষার্থীকে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করে, তাকে উপযুক্ত করে তােলার চেষ্টা করে, তাকে বৃত্তিমুখী শিক্ষা বলে।
(২) বৃত্তিমুখী শিক্ষার ক্ষেত্রটি গভীর, কিন্তু সংকীর্ণ।
(৩) বৃত্তিমুখী শিক্ষা সর্বজনীন নয়।
(৪) বৃত্তিমুখী শিক্ষার নির্দিষ্ট কোনাে পাঠক্রম নেই; বৃত্তিভেদে পাঠক্রমের পরিবর্তন হয়ে থাকে।
(৫) বৃত্তিমুখী শিক্ষায় মূল ব্যবহারিক জ্ঞান এবং বাস্তবমুখী প্রয়ােগের যথার্থতার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
(৬) বৃত্তিমুখী শিক্ষার উদ্দেশ্য হল একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে শিক্ষার্থীকে পারদর্শী ও বিশেষজ্ঞ করে তােলা।
(৭) বৃত্তিমুখী শিক্ষা মূলত ব্যক্তিতান্ত্রিক আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত।
(৮) বৃত্তিমুখী শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও নিজস্বতা প্রকাশের যথেষ্ট সুযোগ থাকে।
(৯) বৃত্তিমুখী শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যয়ভার তুলনামূলকভাবে বেশি।
(১০) বৃত্তিমুখী শিক্ষার শেষে শিক্ষার্থীরা সাধারণত BBA, MBA, CA, MBBS, BCA ইত্যাদি ডিগ্রি লাভ করে থাকে।
(১১) শিক্ষার্থী বৃত্তিমুখী শিক্ষার মাধ্যমে কোনাে একটি বিশেষ ক্ষেত্রে এককভাবে দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ লাভ করতে পারে।

সাধারণ শিক্ষা ও বৃত্তিমুখী শিক্ষার মধ্যে সম্পর্ক

সাধারণ ধর্মীয় শিক্ষা ও বৃত্তিমুখী শিক্ষার মধ্যে কিছু পার্থক্য থাকলেও উভয় শিক্ষা ব্যক্তির জীবনে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য একদিকে সমাজের উন্নয়ন, অন্যদিকে ব্যক্তির পূর্ণাঙ্গ বিকাশ। এই উভয় শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষণ প্রক্রিয়ার সমন্বিত রূপ ধরা পড়েছে যে ব্যক্তি বড়ো হয়ে সমাজে কোনোরূপ উৎপাদনে সাহায্য করতে পারে না , তাকে সমাজে কেউ স্বীকৃতি দেয় না।

বিশেষ ধর্মীয় শিক্ষা সাধারণ ধর্মীয় শিক্ষার উপর নির্ভরশীল: সাধারণ ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া বিশেষ ধর্মীয় শিক্ষা ফলপ্রসূ হতে পারে না। আগে শিক্ষার্থী কিছু সাধারণ ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করবে। অন্তত অষ্টম বা মাধ্যমিক পাস তবে সে বিশেষ ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। যেমন জুনিয়র টেকনিক্যাল স্কুল গুলোতে ভর্তি হতে গেলে অন্তত অষ্টম শ্রেণি পাস করতে হবে, তবেই সে টেলারিং শিখতে বা ওয়েলডিং-এর কাজ করতে পারবে।

সাধারণ ধর্মীয় শিক্ষা বিশেষ ধর্মীয় শিক্ষার উপর নির্ভরশীল : অপরদিকে সাধারণ ধর্মীয় শিক্ষা ও বিশেষ ধর্মীয় শিক্ষার উপর নির্ভরশীল। সাধারণ ধর্মীয় শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হল ব্যক্তিকে বৃত্তিমুখী শিক্ষা দেওয়া বা ব্যক্তির সর্বাঙ্গীণ বিকাশে সহায়তা করা। বিবেকানন্দ বলেছেন, “যে শিক্ষা নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করে না তা শিক্ষাই নয়।” তাই ব্যক্তিকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হলে তাকে বৃত্তিমুখী বিশেষ ধর্মীয় (শিক্ষার অন্তর্গত) শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। তবেই সে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিতে পরিণত হবে।

স্বাধীন ভারতের বিভিন্ন শিক্ষা কমিশন যেমন কোঠারি কমিশন, ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় শিক্ষানীতিতে কর্মশিক্ষার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। গান্ধিজির বুনিয়াদি শিক্ষায় কর্মকেন্দ্রিক শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। যেহেতু বৃত্তিমুখী শিক্ষা বিশেষ দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করে এবং সাধারণ শিক্ষা শিক্ষার্থী বিশেষ শিক্ষা গ্রহণের জন্য প্রস্তুত করে, তাই আধুনিককালের শিক্ষাবিদগণ এই দুই শিক্ষার মধ্যে সমন্বয়ের কথা বলেছেন।

আন্তর্জাতিক শিক্ষা সংস্থা ইউনেস্কো (UNESCO) ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে এক প্রতিবেদনে সাধারণ ও বৃত্তিমুখী শিক্ষার’ মেলবন্ধনের কথা বলছে। সাধারণ শিক্ষা ও বৃত্তিমুখী শিক্ষা পরস্পরের পরিপূরক। বৃত্তি শিক্ষা আমাদের বাস্তব চাহিদা পূরণ করতে পারে সাধারণ শিক্ষা ছাড়া তা পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে না। তাই এই দুই শিক্ষা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।

উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য কোঠারি কমিশনের সুপারিশগুলি কি ছিল। উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্য ও কাঠামাে সম্পর্কে কমিশনের বক্তব্য উল্লেখ করাে।


বর্তমানে প্রচলিত উচ্চ শিক্ষায় স্নাতক স্তরের প্রতিষ্ঠান গুলি  সম্পর্কে আলােচনা করাে।


উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে আলােচনা করাে।