ভারতের ব্যাহত দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন শিশুদের বর্তমান অবস্থা উল্লেখ করাে।

বর্তমান পৃথিবীর সমস্ত দেশে অন্ধ শিশুদের শিক্ষার জন্য বিভিন্ন ধরনের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এ সম্পর্কে ভারতেও বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে এবং হয়ে চলেছে।

ভারতে ব্যাহত দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন শিশুদের বর্তমান অবস্থা

(A) স্বাধীনতার পূর্বের অবস্থা:

(১) দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর সংখ্যা : জনসংখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করলে দেখা যায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সমগ্র বিশ্বে একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। WHO-এর সমীক্ষা অনুযায়ী পৃথিবীর মােট জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৩০ মিলিয়ন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রয়েছে।

(২) অমৃতসর ও দেরাদুন স্কুল : মিশনারীরা সর্বপ্রথম ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে অমৃতসর শহরে দৃষ্টিহীনদের জন্য একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। থাপন করেন। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে এটি দেরাদুন রায়পুর স্থানান্তরিত হয়। এটি হল দৃষ্টিহীনদের জন্য সবচেয়ে বড়াে বিদ্যালয়। বর্তমানে এটি কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালনাধীন। ওই সময় দক্ষিণ ভারতে আরও দুটি বিদ্যালয় গড়ে ওঠে।

(৩) কলকাতায় বিদ্যালয় : ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার বেহালায় স্থাপিত হয় ব্লাইন্ড স্কুল।

(৪) দাদা ব্লাইন্ড স্কুল : অ্যান মিলার্ডের প্রচেষ্টায় ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে দাদারে একটি ব্লাইন্ড স্কুল তৈরি হয়।

(৫) ১৯৪৭-এ মােট ব্লাইন্ড স্কুল : ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ভারতে ব্লাইন্ড স্কুলের সংখ্যা দাড়ায় ৩৪টি।

(৬) দৃষ্টিহীনদের শিক্ষার সুযোগ : ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে দৃষ্টিহীনদের শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির জন্য সরকারি ব্যবস্থা কি রকম ছিল না। দৃষ্টিহীনদের জন্য ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে প্রথম নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষা শুরু হয়। এই বছর কেন্দ্রীয় শিক্ষা উপদেষ্টা বোর্ড (CABE) দৃষ্টিহীনদের শিক্ষা সম্পর্কে পর্যালোচনা করে একটি কমিটি গঠন করে।

(B) স্বাধীনতার পরের অবস্থা :

(১) পরিসংখ্যান তথ্য : নমুনা সমীক্ষা থেকে জানা যায় ভারতে বিদ্যালয়ে যাওয়ার উপযোগী দৃষ্টি হীন শিশুর সংখ্যা প্রায় ৪ লক্ষ। মােট দৃষ্টিহীনদের মধ্যে, যা হিসাব মতে শতকরা ৯০ ভাগ, আমাদের শিক্ষা গ্রহণের কোনো সুযোগ সুবিধা নেই। তবে যে কটি ব্লাইন্ড  স্কুল বর্তমানে রয়েছে তাতে পড়াশােনা করতে পারবে এরকম খুবই কমসংখ্যক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, যা প্রায় ৫ হাজার।

(২) দৃষ্টিহীনদের জন্য ব্যবস্থা :

➧ জাতীয় অনুদান : অন্ধ শিশুদের জন্য বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা যত অর্থ ব্যয় করবে তার ৭৫% সরকার দেবে অনুদান হিসেবে এই প্রতিশ্রুতি নিয়েছে।

➧ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র : অন্ধ শিশুদের শিক্ষাদানের জন্য নিযুক্ত শিক্ষক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে।

➧ পৃথক নিয়োগ : দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের কর্ম নিয়োগের জন্য পৃথক নিয়ােগ পদ্ধতির ব্যবস্থা করেছে সরকার।

➧ গ্রন্থাগার স্থাপন : ব্রেইল সংরক্ষণ করে রাখতে গ্রন্থাগার স্থাপিত হয়েছে। সরকার গবেষণা সংস্থার মাধ্যমে ভারতী ব্রেইল তৈরি করেছে।

(৩) পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা : আমাদের রাজ্যে দৃষ্টিহীন বহু বিদ্যালয় স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরিচালিত হয়। রাজ্য সরকার অনেক স্কুলকে আর্থিক সহায়তা করে, তবে শিক্ষক-শিক্ষণ ব্যবস্থা দৃষ্টিহীনদের ক্ষেত্রে তেমন মজবুত নয়। নরেন্দ্রপুরে এরকম একটি দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য শিক্ষক-শিক্ষণ প্রতিষ্ঠান আছে। এখানে ব্রেইল প্রেস আছে। বর্তমানে মফস্বল এলাকায় অনেক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় খােলা হচ্ছে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রতি বছর ৫০ জনকে শিক্ষক-শিক্ষণ দেওয়া হয়।