শিখনের প্রকৃতি

শিখনের প্রকৃতি

(১) আচারনের পরিবর্তন: আচরণের পরিবর্তন শিখনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। শিখন ঘটলেই আচরণে কিছুনা কিছু পরিবর্তন ঘটবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কোনাে একটি শিশুর ছ্যাকা লাগা সম্পর্কে কোনােরকম অভিজ্ঞতা ছিল না। সে প্রথমবার যখন জ্বলন্ত মােমবাতির আগুনের ওপর হাত দিতে গেল, তখন তার হাতে ছ্যাকা লাগল এবং সে ছ্যাকার যন্ত্রণা অনুভব করল। ফলে একদিকে যেমন তার ছ্যাকা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা হল, অন্যদিকে তেমন এখন থেকে সে আর জ্বলন্ত মােমবাতিতে হাত দেবে না। এর থেকে বােঝা যায় যে, শিশুটি তার পুরােনাে আচরণধারার পরিবর্তন ঘটিয়েছে এবং নতুন আচরণধারা অর্জন করেছে। অর্থাৎ তার শিখন ঘটেছে। তবে এখানে মনে রাখতে হবে, এই পরিবর্তন সর্বদা ইতিবাচক তা নয়, নেতিবাচক পরিবর্তনও হতে পারে।

(২) নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন: শিখনের ফলে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একটি শিশুর ক্ষেত্রে জ্বলন্ত মােমবাতির শিখায় হাত দেওয়ার ফলে একটি নতুন অভিজ্ঞতা হয় এবং যন্ত্রণা অনুভব করায় দ্বিতীয়বার সে জ্বলন্ত শিখায় হাত দেবার চেষ্টা করে না। এটা হল আচরণের পরিবর্তন। এই উদাহরণের সাপেক্ষে বলা যেতে পারে, শিখন হল নতুন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে পুরােনাে আচরণ ত্যাগ করে পরিবর্তিত আচরণধারা আয়ত্ত করার প্রক্রিয়া।

(৩) নতুনত্ব: শিখনের ফলে যে আচরণের পরিবর্তন ঘটে তা বিশ্লেষণ করলে কিছু না কিছু নতুনত্ব দেখা যাবেই। যে শিশু আগে কখনও জ্বলন্ত মোমবাতি হাত দিয়েছিল অভিজ্ঞতা অর্জন বা শিখনের পরে সে আর তাতে হাত দেবে না। অর্থাৎ তার আচরণে নতুনত্ব দেখা দিয়েছে।

(৪) বিশেষ গতিপথ বা প্রেষণা: শিখনের  ফলে আচরণের যে পরিবর্তন ঘটে তার একটি বিশেষ গতিপথ থাকে। শিখনের আগে কোনাে প্রাণীর মধ্যে যে প্রেষণার সৃষ্টি হয়, সেই প্রেষণা প্রাণীকে নির্দিষ্ট পথে নিয়ে গিয়ে তার মধ্যে পরিতৃপ্তি এনে দেয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, শিশু খিদে পেলে এক বিশেষ ধরনের আচরণ করে এবং ওই আচরণ লক্ষ করে মা শিশুকে খেতে দেন। ওই খাদ্য পেলে শিশুর প্রেষণার পরিতৃপ্তি ঘটে।

(৫) উদ্দেশ্য মুখিনতা: শিখন উদ্দেশ্যমুখী এবং লক্ষ্যকেন্দ্রিক। কোনাে উদ্দেশ্য না থাকলে তাকে শিখন বলা যায় না।

(৬) অনুশীলনের প্রভাব: শিখনের ওপর অনুশীলনের ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়। শিখনের ওপর অনুশীলনের প্রভাব বিষয়ে বহু পরীক্ষা হয়েছে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, প্রথম দিকের অনুশীলনে শিখনের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। তারপর বৃদ্ধি ঘটে কিন্তু তার হার হ্রাস পায় এবং এমন এক সময় আসে যখন শিখনের ওপর অনুশীলনের প্রভাব দেখা যায় না, যাকে শিখনে আদিত্যকা বলে। তবে প্রেষণা বৃদ্ধির ফলে বা শিখনপদ্ধতি পরিবর্তনে অধিত্যকাকে অতিক্রম করা যায়। শিখনের ওপর অনুশীলনের প্রভাবকে একটি লেখচিত্রে রূপ দিলে লেখচিত্র কেমন হবে তা দেখানাে হল।

(৭) সমস্যা সমাধানের তাগিদ: শিখনের ক্ষেত্রে আর-একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সমস্যা। সমস্যা না থাকলে প্রাণী কোনাে কিছুই শিখতে চায় না। সমস্যা সমাধানের তাগিদেই সে তার বর্তমান আচরণের পরিবর্তন ঘটিয়ে নতুন আচরণ আয়ত্ত করার দিকে অগ্রসর হয়।

(৮) পরিণমনের গুরুত্ব: শিখনের ক্ষেত্রে অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল পরিণমন। শিখন অনেক ক্ষেত্রেই পরিণমনের ওপর নির্ভরশীল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, শিশুর পেশি বিশেষভাবে সবল এবং পুষ্ট না হলে তাকে সাইকেল চালানাে শেখানাে যায় না, কিংবা শিশুর জিভের জড়তা দূর না হলে তাকে ভাষা শিক্ষা দেওয়া যায় না। অর্থাৎ পরিণমন ছাড়া শিখন ফলপ্রসূ হয় না।

(৯) শিখন একটি প্রক্রিয়া: শিখন একটি প্রক্রিয়া যার পরিচয় মেলে ফলের মাধ্যমে সর্বজনীন এবং নিরবিচ্ছিন্ন প্রকৃতি শিখন হল সর্বজনীন এবং নিরবচ্ছিন্ন। প্রতিটি সজীব প্রাণীই শেখে। মানুষের শিখনের ক্ষেত্রে বয়স, লিঙ্গ, জাতি বা সংস্কৃতির কোনাে সীমাবদ্ধতা নেই।

(১০) সঞ্চালনযোগ্য: গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, শিখন সেবনযোগ্য। একটি ক্ষেত্রে শিখন অন্য ক্ষেত্রে সঞ্চালিত হয়।

(১১) চাহিদা নির্ভর: শিখন চর্চা বা অনুশীলনের ওপর নির্ভরশীল। চর্চা বা অনুশীলনের অভাবে শিখনের শক্তি হ্রাস পায়।