শিখন ও পরিণমনের মধ্যে সম্পর্ক

শিখন ও পরিণমনের মধ্যে সম্পর্ক 

শিখন হল আচরণধারার এমন এক স্থায়ী পরিবর্তন যা অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণের দ্বারা অর্জন করা যায়। এই প্রক্রিয়ায় ব্যক্তির আচরণের পরিবর্তন ঘটিয়ে অভিযােজন ক্ষমতা অর্জন করা যায়।

অন্যদিকে, পরিণমন হল এমন এক প্রক্রিয়া যা অনুশীলন বা শিখন নিরপেক্ষ এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ব্যক্তির মধ্যে এটি সংঘটিত হয়ে ব্যক্তির বিকাশ ঘটায়। এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক উপায়ে সুনির্দিষ্টভাবে বিকশিত হতে থাকে। অর্থাৎ পরিণমন হল পরিপক্কতা বা স্বাভাবিক পরিণতি।
  • পারস্পরিক সম্পর্ক: শিখন ও পরিণমন দুটি আলাদা প্রক্রিয়া। পরিণমনের অর্থ স্বতঃস্ফূর্ত বিকাশ, যা শিখনের উপর নির্ভর করে না, কিন্তু শিখন পরিণমনের উপর নির্ভরশীল। কখনাে কখনাে এটি নির্ধারণ করা কষ্টকর যে আচরণগত পরিবর্তন শিখন না পরিণমনের ফল। শিশু তখনই কথা বলতে শেখে যখন সে পরিণমনের বয়সস্তরে পৌছােয়। অর্থাৎ শিখন তখনই হয় যখন পরিণমনের উপযােগী বয়সে শিশু পৌছােয়।
  • বিকাশমূলক প্রক্রিয়া : পরিণমন ও শিখন উভয়ই বিকাশমূলক প্রক্রিয়া। পরিণমন শিখন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয় কিন্তু শিখন পরিণমন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে শিশুর বিকাশে সহায়তা করে।
  • শিক্ষাবিদদের মতামত : শিক্ষাবিদদের মতে, শিশুর শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে, নতুন শিখনের ক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিণমনের দরকার।
  • বিবিধ পরীক্ষা : শিখন ও পরিণমনের মধ্যে সম্পর্ক বােঝাতে গিয়ে বিভিন্ন মনােবিদ, যেমন— স্ট্রেয়ার, আর্নল্ড গেসেল, হিলগার্ড প্রমুখ বিভিন্ন পরীক্ষা করেছেন। এঁদের মধ্যে একটি পরীক্ষা নিয়ে আলােচনা করা হল— ম্যাকগ্র (MacGraw) ১২ মাস বয়সের দুটি যমজ শিশুর উপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখেন। একটি শিশুকে প্রশিক্ষণ দিতে ১২ মাস বয়স থেকে সে হাঁটতে শিখল। অপর শিশুটিকে প্রশিক্ষণ না দেওয়ায় দেখা গেল সে ওই বয়স থেকে হাঁটতে শিখল না। কিন্তু ১৫ মাস বয়স থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে হাঁটতে শিখল সমান দক্ষতার সঙ্গে। মনােবিদদের মতে, সঠিক পরিণমনের সঙ্গে সঙ্গে শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বৃদ্ধি ও বিকাশ ঘটে। তাই এই স্বাভাবিক বিকাশের উপর নির্ভর করে শিখন সম্ভব হয়।
  • সিদ্ধান্ত : উপরােক্ত আলােচনা থেকে বােঝা গেল, পরিণমনের উপর শিখন নির্ভরশীল। উপযুক্ত পরিণতি প্রাপ্তির আগে জোর করে বাহ্যিক প্রচেষ্টার দ্বারা শিখন প্রায় অপব্যয়ের নামান্তর। পরিণমন শিখনের গতিবেগ নির্ধারণ করে। শিখন কখন থেকে শুরু করলে সাফল্য আসবে তা পরিণমন নির্দেশ করে। সুতরাং পরিণমন ও শিখন এই দুই প্রক্রিয়ার মিলিত ফল মানুষের বিকাশ ঘটায়।