পরীক্ষা ব্যবস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও শিক্ষার মাধ্যম সম্পর্কে রাধাকৃষ্মণ কমিশনের সুপারিশগুলি উল্লেখ করাে।

পরীক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে রাধাকৃষ্মণ কমিশনের সুপারিশ

প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতির অসারতা সম্বন্ধে রাধাকৃষণ কমিশন বলেছিল— “If we are to suggest one single reform in university education, it should be that of examinations.” —এককথায় প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতির তীব্র সমালােচনা করেছিল কমিশন। পরীক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার সম্বন্ধে কমিশনের সুপারিশগুলি ছিল—
 
(১) শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের মূল্যায়নের জন্য অন্তিম পরীক্ষার পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষের কার্যাবলির মূল্যায়নের ব্যবস্থা করতে হবে।

(২) মােট নম্বরের ১/৩ অংশ নম্বর শ্রেণির কার্যাবলির ক্ষেত্রে এবং অবশিষ্ট ২/৩ অংশ নম্বর অন্তিম মূল্যায়নের জন্য ধার্য করতে হবে।

(৩) তিন বছরের স্নাতক পরীক্ষা একেবারে তিন বছরের শেষে গ্রহণ না করে, নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে।

(৪) বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে তিনটি বিভাগে পড়ানাের ব্যবস্থা থাকবে। প্রথম বিভাগে পাস করতে গেলে কমপক্ষে ৭০ শতাংশ, দ্বিতীয় বিভাগে কমপক্ষে ৫৫ শতাংশ এবং তৃতীয় বিভাগে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে।

(৫) কোনাে বিষয়ে পরীক্ষক হতে গেলে শিক্ষককে কমপক্ষে পাঁচ বছর ওই বিষয়ে পাঠদান করতে হবে।

(৬) পেশাগত ডিগ্রি এবং স্নাতকোত্তর স্তরের পরীক্ষায় মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে।

(৭) Grace marks দেওয়ার রীতি ত্যাগ করতে হবে।

(৮) কমিশন সরকারি চাকুরির ক্ষেত্রে পৃথক পরীক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে।

(৯) সরকারি চাকুরির জন্য পৃথক পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা হলে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের পরীক্ষা ব্যবস্থার বহু ত্রুটিই দূরীভূত হবে।

(১০) অভীক্ষা প্রস্তুতির কাজ কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপােষকতায় শুরু করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সম্পর্কে রাধাকৃষ্মণ কমিশনের সুপারিশ

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন শ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সম্পর্কিত যে সুপারিশগুলি করে, সেগুলি হল — 

(১) রাজ্যে রাজ্যে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্ব থাকবে রাজ্য সরকারের উপর কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপযুক্ত পরিচালন ব্যবস্থা সম্বন্ধে কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে।

(২) বিশ্ববিদ্যালয়গুলি শুধুমাত্র অনুমােদনধর্মী হবে না।

(৩) স্নাতক স্তরের সর্বপ্রকার দায় রাজ্যের শিক্ষাবিভাগের উপর থাকলেও স্নাতকোত্তর স্তরের শিক্ষা ও গবেষণামূলক পরিচালনার দায়দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের উপর রাখাই বাঞ্চনীয়।

(৪) বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কার্যাবলি যথাক্রমে সঠিকভাবে পরিচালনা করা, অর্থসংস্থানের ব্যবস্থা করা, জাতীয় শিক্ষানীতির রূপায়ণ ঘটানাে ইত্যাদি ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের নজর থাকবে।

(৫) যেসকল কলেজ সরকারি, সেগুলিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত কলেজে পরিণত করতে হবে।

(৬) বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা কলেজগুলির যেসকল বিষয়ের দিকে লক্ষ রাখতে হবে সেগুলি হল—কলেজটি আদৌ শিক্ষার্থীদের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারছে কি না, এই কলেজগুলি গ্রান্ট-ইন-এইড পেতে পারে কি না প্রভৃতি।

(৭) বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনার জন্য থাকবে— 
  • আচার্য (প্রাদেশিক গভর্নর) 
  • উপাচার্য (vice-chancellor), 
  • পরিদর্শক (গভর্নর জেনারেল), 
  • সেনেট বা কোর্ট, 
  • অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল, 
  • সিন্ডিকেট বা এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল 
  • ফ্যাকাল্টিজ, 
  • বট বাের্ড অব স্টাডিজ, 
  • সিলেকশন কমিটি বা নির্বাচন কমিটি এবং 
  • ফিন্যান্স কমিটি।

শিক্ষার মাধ্যম সম্পর্কে রাধাকৃষ্মণ কমিশনের সুপারিশ

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রে ভাষা সম্বন্ধে নিম্নলিখিত সুপারিশ করেছিল— “Higher education be imported through the instrumentality of the regional language with the option to use the Federal Language as the medium of instruction either for some subjects or for all subjects."

(১) মাধ্যমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত কমিশন একটি ত্রিভাষা নীতির সুপারিশ করেছিল। এই তিনটি ভাষা হল— 
  • মাতৃভাষা বা আঞ্চলিক ভাষা, 
  • ফেডারেল ল্যাঙ্গুয়েজ বা হিন্দি ভাষা বা সর্বভারতীয় ভাষা, 
  • ইংরেজি ভাষা।
(২) সকল বিষয়ের জন্য রাষ্ট্রীয় ভাষা (হিন্দি) নির্বাচন করতে হবে।

(৩) উচ্চশিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজির পরিবর্তে কোনাে ভারতীয় ভাষাকে (আলিক ভাষা) গ্রহণ করতে হবে।

(৪) উচ্চমাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে তিনটি ভাষার সঙ্গেই পরিচিত হতে হবে ।

এই সুপারিশগুলিকে কার্যকর করার জন্য কমিশন অবিলম্বে পরিভাষা প্রস্তুত করার কাজ শুরু করার পরামর্শ দিয়েছিল। এ ছাড়া বিজ্ঞান ও কারিগরি বিদ্যাশিক্ষার জন্য অবিলম্বে পরিভাষা প্রস্তুতির সুপারিশও কমিশন করেছিল।

কমিশনের মতে, উচ্চশিক্ষার মাধ্যম হবে আঞ্চলিক ভাষা। তবে কোনাে কোনাে বিষয়ের ক্ষেত্রে সর্বভারতীয় ভাষাকে (হিন্দি) মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে। ক্রমবর্ধমান জ্ঞানের সঙ্গে সংগতি বিধানের জন্য মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ইংরেজি ভাষার চর্চা চালিয়ে যেতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন বা রাধাকৃষ্মণ কমিশনের (১৯৪৮-৪৯ খ্রি:) মূল সুপারিশগুলি কী ছিল?


পাঠক্রম সম্পর্কে কমিশনের সুপারিশ বর্ণনা করাে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার কাঠামাে প্রসঙ্গে রাধাকৃষ্মণ কমিশনের বক্তব্য কী। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার পাঠক্রম সম্পর্কে কমিশনের সুপারিশগুলি আলােচনা করাে।


বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন স্নাতকোত্তর শিক্ষা ও গবেষণা প্রসঙ্গে যেসব গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করে, তা আলােচনা করাে।