শিক্ষাদানের মানোন্নয়নের সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের সুপারিশগুলি আলােচনা করাে।

শিক্ষাদানের মানোন্নয়নের সুপারিশ

ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তিলাভের পর উচ্চশিক্ষার সংস্কারের লক্ষ্যে ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে গড়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন। উচ্চশিক্ষার সংস্কারসাধনে নানাদিকে লক্ষ দেওয়ার পাশাপাশি কমিশন উপলব্দি করেছিল কেবল প্রতিভাবান শিক্ষক নিয়ােগ করলেই চলবে না, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার সঠিক সংস্কারের জন্য উন্নতমানের শিক্ষাদান ও পরীক্ষণ ব্যবস্থা বিশেষভাবে প্রয়ােজনীয়। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমাদের দেশের স্নাতকরা যাতে মর্যাদার আসন লাভ করতে পারে, সেই দিকে নজর দিয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মানােন্নয়ন করতে হবে। এর জন্য কমিশন কতকগুলি সুপারিশ লিপিবদ্ধ করে। সেগুলি হল— 

(১) ইন্টারমিডিয়েট বিলুপ্তিকরণ: বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্টারমিডিয়েট স্তর সরিয়ে নিয়ে গিয়ে সেটিকে উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রমের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।

(২) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাড়পত্র : শিক্ষার্থীরা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১২ বছরের শিক্ষা শেষ করলে তবে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে প্রবেশের ছাড়পত্র পাবে।

(৩) মাধ্যমিক কলেজ স্থাপন : প্রতিটি রাজ্যে অধিকসংখ্যক মাধ্যমিক মহাবিদ্যালয় স্থাপন করার পরামর্শ দেয় কমিশন।

(৪) পাঠদানের বিভাগ : মাধ্যমিক বিদ্যালয় বা মাধ্যমিক কলেজে নবম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অথবা ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদানের ব্যবস্থা থাকবে, যাতে শিক্ষার্থীরা ১২ বছরের শিক্ষা শেষ করতে পারে।

(৫) বৃত্তিশিক্ষা : সাধারণধর্মী শিক্ষার পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীরা যাতে বৃত্তিশিক্ষার সুযােগ লাভ করতে পারে তার জন্য সারা দেশে বহুসংখ্যক বৃত্তিশিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের সুপারিশ করে কমিশন।

(৬) রিফ্রেশার কোর্স : শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শিক্ষাগত যােগ্যতাকে সময়ােপযােগী করে তােলার জন্য কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে রিফ্রেশার কোর্স প্রবর্তনের জন্য সুপারিশ করে।

(৭) শিক্ষার্থীদের সংখ্যা : মহাবিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা যাতে নিয়ন্ত্রিত থাকে তার জন্য মহাবিদ্যালয়গুলি সর্বোচ্চ ১৫০০ জন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ ৩০০০ জন শিক্ষার্থী ভরতির সুপারিশ করে কমিশন।

(৮) শিখন-শিক্ষণ ও অন্যান্য  ব্যবস্থা : কমিশনের মতে, মহাবিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিখন-শিক্ষণ দিবস হবে বছরে কমপক্ষে ১৮০ দিন। পরীক্ষা ও অন্যান্য কর্মসূচির দিনগুলি এই সংখ্যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে না। প্রতিটি শিক্ষাবর্ষকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হবে। প্রত্যেক পর্যায়ের স্থায়িত্ব হবে ১১ সপ্তাহ।

(৯) মনােগ্রাহী পাঠদান : শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠদানের কৌশলকে মনােগ্রাহী করে তােলার জন্য টিউটোরিয়াল ক্লাস, লিখন অনুশীলন, গ্রন্থাগারের কাজ প্রভৃতির সুপারিশ করে কমিশন।

(১০) গ্রন্থাগার : বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রন্থাগারের প্রয়ােজনীয়তার দিকে লক্ষ রেখে অধিক সংখ্যক গ্রন্থাগার স্থাপন ও তার উন্নতিকল্পে প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

(১১) উপযুক্ত গ্রন্থাগার কর্মী নিয়ােগ : গ্রন্থাগারগুলিকে আকর্ষণীয় করে গড়ে তােলার পাশাপাশি উপযুক্ত যােগ্যতাসম্পন্ন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গ্রন্থাগার কর্মী নিয়ােগ করতে হবে।

(১২) ব্যাবহারিক জ্ঞান : বিষয় জ্ঞানের পাশাপাশি ব্যাবহারিক জ্ঞানের প্রয়ােজনের উদ্দেশ্যে পরীক্ষানিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য গবেষণাগারের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। এরজন্য কর্তৃপক্ষকে উপযুক্ত অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থা করতে হবে।

(১৩) পুস্তক নির্বাচন : কমিশনের মতে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নির্ধারিত কোনাে কোর্সের জন্য নির্দিষ্ট পাঠ্যপুস্তক থাকবে না। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন পুস্তক অধ্যয়নের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করবে।

(১৪) শিক্ষার্থীর উপস্থিত : শিক্ষার্থীদের নিয়মিত শ্রেণিকক্ষে হাজির থাকতে হবে।

(১৫) প্রাইভেটে পরীক্ষাদান : কেবলমাত্র প্রাইভেট শিক্ষার্থীরা মহাবিদ্যালয়ে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ পরীক্ষাদানের সুযােগ লাভ করবে।

(১৬) সান্ধ্যকালীন কলেজ : যারা কোনাে সংস্থায় চাকুরিরত, তাদের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে সান্ধ্যকালীন মহাবিদ্যালয় খােলা যেতে পারে।

সুতরাং সবদিক থেকে বিচারবিশ্লেষণ করে বলা যায় যে, উপরােক্ত আলােচ্য সুপারিশগুলি বিশ্ববিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ে মানােন্নয়নের জন্য যথেষ্ট কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের এই সমস্ত শিক্ষাসংস্কার বিষয়ক সুপারিশগুলি জাতীয় জীবনধারার মানকে উন্নয়ন করে ব্রিটিশ শাসনে বিধ্বস্ত দেশবাসীকে জ্ঞানের নতুন দিশা দেখিয়েছিল।

পরীক্ষা ব্যবস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও শিক্ষার মাধ্যম সম্পর্কে রাধাকৃষ্মণ কমিশনের সুপারিশগুলি উল্লেখ করাে।


ভাষা সম্পর্কে রাধাকৃষ্মণ কমিশনের অভিমত কী ছিল?


উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষক সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশনের সুপারিশগুলি আলােচনা করাে।