নারী প্রয়ােজনীয়তা কী? স্বাধীন ভারতে নারী শিক্ষা বিষয়ে রাধাকৃষ্মণ কমিশন, মুদালিয়র কমিশন ও কোঠারি কমিশনের সুপারিশগুলি লেখাে।

নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা

যে-কোনাে রাষ্ট্রের উন্নতির জন্য নারীশিক্ষা অপরিহার্য। রাষ্ট্রের উন্নতিতে মহিলাদের অবদান অনস্বীকার্য। মহিলারাই তাদের শিশুদের এমনভাবে গড়ে তুলতে পারে, যারা ভবিষ্যতে দেশকে অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। শিক্ষিত মহিলারা নিজের পরিবার ও সমাজকে সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে উন্নত করে তুলতে পারেন। হিন্দুশাস্ত্রে তাই নারীদের পূজা করার কথা বলা হয়েছে। এই পূজা কিন্তু প্রথাগত পূজা নয়। এখানে পূজা করার অর্থ নারীকে যথাযােগ্য সম্মান জানানাে, তাদের জন্য সঠিক শিক্ষার ব্যবস্থা করে দেওয়া এবং সমাজে তাদের স্থান পুরুষদের সমান বলে বিবেচনা করা। মানবসম্পদের পরিপূর্ণ ও যথাযযাগ্য বিকাশ, সামাজিক ন্যায় স্থাপন, গৃহপরিবেশের উন্নতি ও সর্বোপরি পরিবার পরিকল্পনার জন্য নারীশিক্ষার একান্ত প্রয়ােজন।

নারীশিক্ষার উন্নতিকল্পে রাধাকৃষ্মণ কমিশনের সুপারিশ

(১)  Co-education কলেজগুলিতে মেয়েদের জন্য প্রয়ােজনীয় সুযােগসুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে।

(২)  মেয়েদের শিক্ষালাভের সুযােগ বৃদ্ধি করতে হবে।

(৩)  নারী ও পুরুষদের শিক্ষার মধ্যে কতকগুলিবিষয়ে সাদৃশ্য থাকলেও মেয়েদের জন্য বিশেষ ধরনের শিক্ষারও ব্যবস্থা করতে হবে।

(৪)  সমাজে নাগরিক হিসেবে ও মেয়েরা যাতে উপযুক্ত মর্যাদা পায় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

(৫) কো-এডুকেশনাল কলেজে ছাত্রছাত্রী উভয়েই যাতে সৌজন্যবােধ ও সামাজিক দায়িত্ববােধের উপযুক্ত শিক্ষা লাভ করে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

(৬)  শিক্ষিকারাও একই প্রকার কাজের জন্য শিক্ষকদের সমহারে বেতন পাবেন।

নারী শিক্ষার উন্নতিকল্পে মুদালিয়র কমিশনের সুপারিশ

(১)  ছেলেমেয়েদের একই প্রকার শিক্ষা দেওয়া প্রয়ােজন অর্থাৎ পাঠক্রম যেন একই হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

(২)  প্রয়ােজন অনুসারে রাজ্য সরকারকে মেয়েদের জন্য পৃথক স্কুল স্থাপনের চেষ্টা করতে হবে।

(৩)  মেয়েদের স্কুল এবং Co-educational গার্হস্থ্য বিজ্ঞান পাঠের ব্যবস্থা করতে হবে।

(৪)  মেয়েদের জন্য পাঠ্যসূচিতে সংগীত, কলা ইত্যাদি বিষয় অনুমােদন করার সুপারিশ করা হয়।

(৫)  সহশিক্ষা চালু আছে এমন বিদ্যালয়ে বা মিশ্র বিদ্যালয়ে মেয়েদের ও শিক্ষিকাদের অসুবিধাগুলি দূর করার জন্য কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক হতে হবে।

নারী শিক্ষার উন্নতিকল্পে কোঠারি কমিশনের সুপারিশ

শিক্ষাক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের পার্থক্য কমিয়ে সকলের জন্য সমানাধিকার দেওয়ার ব্যাপারে কোঠারি কমিশন আগের নারীশিক্ষা কমিটির অর্থাৎ National Committee for Women Education (১৯৫৮ খ্রি.), হংস মেহেতা কমিটি (১৯৬১ খ্রি.) ও ভক্তবৎসলম কমিটি (১৯৬৩ খ্রি.)-এর সুপারিশ সমর্থন করেছে ও সুপারিশগুলি কার্যকর করার কথা বলেছে। কমিশন নিম্নলিখিত সুপারিশগুলি করে— 

(১)  আগামী কয়েক বছর মেয়েদের শিক্ষার কর্মসূচির উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে ও স্ত্রী-পুরুষের শিক্ষার পার্থক্য যথাশীঘ্র কমিয়ে আনতে হবে।

(২)  মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে বিশেষ কতকগুলি পরিকল্পনা নিতে হবে এবং গুরুত্ব অনুসারে এগুলিকে আর্থিক সাহায্য দিতে হবে।

(৩)  উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের অনুপাত ১:৪ বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষিত মহিলার চাহিদা বিবেচনা করে ওই অনুপাতকে বৃদ্ধি করে ১:৩ করতে হবে। এর জন্য মেয়েদের বৃত্তি দেওয়ার ব্যবস্থা ও Hostel-এর ব্যবস্থা করতে হবে।

(৪)  স্থানীয় চাহিদা অনুসারে মেয়েদের জন্য কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। স্নাতকোত্তর স্তরে মেয়েদের জন্য পৃথক ব্যবস্থার প্রয়ােজন নেই। একইসঙ্গে ছেলেমেয়েরা পড়বে।

(৫)   কলা, বাণিজ্য-বিজ্ঞান, কারিগরি সকল বিভাগেই মেয়েদের ভরতির সুযােগ দিতে হবে। মেয়েদের জন্য গাহস্থ্যবিদ্যা, নার্সিং ট্রেনিং, সমাজসেবা ইত্যাদি বিষয় পড়ানাের ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে এবং পাঠক্রমকে অত্যাধুনিক করতে হবে। মেয়েদের জন্য ব্যবস্থা সংক্রান্ত প্রশাসন ও পরিচালন ব্যবস্থা বিষয়ে পড়ার সুযােগ করে দিতে হবে।

(৬)  Women Education বিষয়ে গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বিশেষ ব্যবস্থা করতে হবে।

(৭)  মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে তত্ত্বাবধান করার জন্য রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরে বিশেষ সংগঠন বা সংস্থা গড়ে তুলতে হবে। এই সংস্থা নারীশিক্ষার পরিকল্পনা গ্রহণ করবে এবং এই সংক্রান্ত বিভিন্ন কর্মসূচিকে বাস্তবায়িত করবে।

(৮)  মেয়েরা যাতে সাংসারিক কাজকর্ম করার সঙ্গে সঙ্গে আংশিক সময়ের চাকুরি পায় তার সুযােগ সৃষ্টি করতে হবে। সেইসঙ্গে মেয়েদের পুরাে সময়ের জন্যও কাজের সুযােগ বাড়াতে হবে। শিক্ষকতা, নার্সিং, সমাজসেবা ছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রে কাজের সুযােগ বৃদ্ধি করতে হবে।