ব্যাপক অর্থে বয়স্ক শিক্ষা বলতে কী বোঝায়?

ব্যাপক অর্থে বয়স্ক শিক্ষা

বয়স্ক শিক্ষা বলতে কী বােঝায়, তা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বয়স্ক বলতে ১৪-৪৫ বছর বয়স্ক সকল ব্যক্তিদের বোঝায়।

Earnest Barker-এর মতে, বয়স্ক শিক্ষা হল এমন এক শিক্ষা যা আংশিক সময়ের ভিত্তিতে দেওয়া হয়, যে শিক্ষা যুগ্মভাবে সম্পন্ন হয়। যাতে একজন জীবিকা নির্বাহের সঙ্গে সঙ্গে পড়াশোনা করতে পারে।

Morgan, Hatmes Bundy এদের মতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির নতুন কিছু শেখার চেষ্টা হল বয়স্ক শিক্ষা। বয়স্ক শিক্ষার মাধ্যমে একজন পরিপক্ক নাগরিক লিখতে-পড়তে শেখানো, স্বাস্থ্য সচেতনতা বোধ, গণতান্ত্রিক মনোভাব, অর্থনৈতিক সচেতনতা বোধ ইত্যাদি বিকাশে সহায়তা করা হয়।

V K R V Rao- এর মতানুসারে বয়স্ক শিক্ষা ছাড়া অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতির মাত্রা নির্ণয় করা যায় না। সামাজিক ও অর্থনৈতিক কল্যাণের মাত্রা অনেকখানি নির্ভর করে বয়স্ক শিক্ষার উপর।

বয়স্ক শিক্ষা বলতে শুধু নিরক্ষরদের বয়স্ক শিক্ষা বোঝায় না। কার্যকরী সাক্ষরতা (Functional Literacy), সামাজিক শিক্ষা, বয়স্ক সাক্ষরতা সবকিছু বয়স্ক শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত।

➽ কার্যকরী সাক্ষরতা (Functional Literacy) : যে মাত্রার সাক্ষরতা ব্যক্তিকে সামাজিক ও পেশাগত জীবনে উপযুক্ত করে তোলে, তাকে কার্যকরী সাক্ষরতা বলে। কার্যকরী সাক্ষরতার আরও কতগুলো বৈশিষ্ট্য হল -

(১) কার্যকরী সাক্ষরতার মাধ্যমে ব্যক্তি উত্তম পঠনপাঠনের ক্ষমতা অর্জন করতে পারবে।
(২) কোনাে বিষয় পাঠ করে তার অর্থ বুঝতে সক্ষম হবে।
(৩) নাগরিক হিসেবে ব্যক্তি যথাযথ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে সক্ষম হবে।
(৪) ব্যক্তি যা পাঠ করছে তার মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগের অর্থ বুঝতে সক্ষম হয়।
(৫) ৩০০ বা তার বেশি সংখ্যক বিষয় যা শব্দভাণ্ডারে রয়েছে, তা নিঃশব্দে অর্থ-সহ পড়তে সক্ষম।

অর্থাৎ সাধারণ অর্থে সাক্ষরতা বলতে লিখতে, পড়তে ও সাধারণ পাটিগণিত জ্ঞানকে বোঝায়। কিন্তু কার্যকরী বা ব্যাবহারিক সাক্ষরতা বলতে বোঝায় দৈনন্দিন জীবনে স্বাক্ষরতা কি কাজে লাগানো, যে সাক্ষরতা মানুষকে তার নিজের জীবনে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক প্রভৃতি সকল ক্ষেত্রে সক্রিয়তা কি আরও উন্নততর স্তরে পৌছে দিতে সাহায্য করে।

মূল উদ্দেশ্য : জাতীয় সাক্ষরতা মিশন কর্মসূচিতে ব্যাবহারিক সাক্ষরতার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য হল ব্যাবহারিক সাক্ষরতায় কোনাে ব্যক্তি যে যে পেশা বা কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে সেই সম্পর্কে ব্যাবহারিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাকে আরও দক্ষ ও সক্রিয় এবং উৎপাদনশীল করে তোলা।

➽ সামাজিক শিক্ষা (Social Education) : ভারতে বয়স্ক শিক্ষা, সামাজিক শিক্ষা হিসেবে পরিচিত। মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে ভারতে বয়স্ক শিক্ষাকে সামাজিক শিক্ষা হিসেবে ঘোষণা করেন। গণতান্ত্রিক সমাজে প্রতিটি নাগরিক যাতে তার যথাযোগ্য দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হন, সেই শিক্ষায় বয়স্ক শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত হবে। তবে পঞ্চম পরিকল্পনা বয়স্ক শিক্ষা বা সামাজিক শিক্ষা কথাটির পরিবর্তে বয়স্ক সাক্ষরতা কথাটি ব্যবহৃত হচ্ছে। সামাজিক শিক্ষা বলতে বোঝায়—

(১) ১৮-৩৫ বছর বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে সাক্ষরতার প্রসার ঘটানাে।
(২) গণতান্ত্রিক নাগরিক হিসেবে দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া।
(৩) অর্থনৈতিক ভীমকে সুদৃঢ় করা।
(৪) দৈহিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানো।
(৫) অবসর সময় সুস্থভাবে কাটানোর জন্য সাংস্কৃতিক ও নান্দনিক বোধের বিকাশ ঘটানো। 
(৬) ব্যক্তির সামাজিক, রাজনৈতিক জীবনকে উন্নততর করে গড়ে তোলা।
(৭) নৈতিক বােধের বিকাশ ঘটানো ইত্যাদি।

১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী সামাজিক শিক্ষার ধারণাকে নিম্নোক্তভাবে ব্যক্ত করেছে—

(a) সামাজিক শিক্ষা হল সেই শিক্ষা যা ব্যক্তির সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিক জীবনের উন্নতি ঘটায়। 
(b) এই শিক্ষা কমিউনিটিকে বিকাশের পথ দেখায়।
(c) এই শিক্ষা উন্নত বিনোদনের মাধ্যমে অবসর সময়কে ব্যবহার করে।
(d) সমাজ পরিবর্তনের প্রয়োজনীয় শিক্ষা হল সামাজিক শিক্ষা।
(e) পঞ্চম যোজনা বয়স্ক শিক্ষা ও সামাজিক শিক্ষা' কথাটির পরিবর্তে বয়স্ক সাক্ষরতা’ (Adult Literacy) কথাটি ব্যবহৃত হয়েছে।

সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কয়েকটি পদক্ষেপ আলোচনা করো। প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বজনীন করার গৃহীত উদ্যোগগুলি কী কী?


ভারতবর্ষের সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা কাকে বলে? প্রাথমিক শিক্ষা সর্বজনীকরণের সমস্যা গুলো আলােচনা করাে।


প্রাথমিক শিক্ষার সর্বজনীকরণের প্রেক্ষিতে ভারত সরকারের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গুলো কি কি? এই প্রসঙ্গে বয়স্ক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করো।