জাতীয় শিক্ষানীতি পূর্বক এর উদ্দেশ্য বিবৃত করো।

জাতীয় শিক্ষানীতির উদ্দেশ্য

শিক্ষা কমিশনের (১৯৬৪-৬৬ খ্রি.) কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর ভিত্তি করে জাতীয় শিক্ষানীতি (১৯৮৬ খ্রি.)-র পরিকাঠামাে রচিত হয়েছে। এই নতুন শিক্ষানীতির উদ্দেশ্য গুলি হল— 

(১) সমতা বিধান ও সমসুযোগ দান: শিক্ষানীতির রচয়িতারা ভবিষ্যৎ ভারতের নাগরিক কীভাবে গড়ে তুলতে চান, তাদের শিক্ষার উদ্দেশ্য কী হবে, কোআদর্শ তাদের সামনে তুলে ধরা হবে, ভবিষ্যতে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য কী হবে, এজন্য তাদের কি সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে, দশটি অধ্যায় তা বিস্তৃতভাবে ব্যাখ্যা। দেশের প্রতিটি শিক্ষার্থী যাতে সমসুযোগ পায়, শিক্ষকরা যাতে নিজস্ব দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করতে পারে— সে ব্যাপারে শিক্ষানীতিতে বারবার বলা হয়েছে।

(২) শিক্ষার্থীদের সচেতনতা ও মূল্যবোধ সৃষ্টি : প্রতিটি শিক্ষাস্তরের মান উন্নয়ন, বিজ্ঞান সচেতনতা, নৈতিক মূল্যবোধের, গণতান্ত্রিক চেতনা প্রভৃতি বােধগুলি শিক্ষার্থীর মধ্যে সৃষ্টি করতে হবে। শিক্ষার মধ্য দিয়ে জাতীয় সংহতির বাধা সৃষ্টি করা, বিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করা ইত্যাদি এই শিক্ষানীতির উদ্দেশ্য। পাঠক্রমে ভাষা, সাহিত্য, গণিত, বিজ্ঞান, কর্ম অভিজ্ঞতা ইত্যাদিকে আবশ্যিক করা হয়েছে।

(৩) বৃত্তি ও কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব : বিজ্ঞান ও কারিগরি, প্রযুক্তি, ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি অত্যাধুনিক প্রয়োজন ভিত্তিক শিক্ষার উপরেও সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের স্বনির্ভর করে গড়ে তোলার জন্য বৃত্তি ও কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

(৪) শিক্ষায় প্রথা বহির্ভূত ব্যবস্থার প্রচলন : সমসুযোগ করলে যেমন হয়েছে নারী জাতি, তপশিলি জাতি-উপজাতি সকল মানুষেরা, তেমনি নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্তির জন্য প্রথা বহির্ভূত শিক্ষা ও বয়স্ক শিক্ষার প্রচলন করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী মানুষ প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য বিশেষ শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

(৫) প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করা : এই শিক্ষানীতির অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করা। সেই উদ্দেশ্যে যথাক্রমে ‘অপারেশন ব্ল্যাকবাের্ড’ ও নবােদর বিদ্যালয় কর্মসূচির সুপারিশ গ্রহণ করা হয়।

(৬) দৈহিক বিকাশের উপর গুরুত্ব আরোপ : শিক্ষার্থীর দৈহিক বিকাশের জন্য ব্যায়াম ও খেলাধুলার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

(৭) পরীক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার ও শিক্ষাক্ষেত্রে জাতীয় বরাদ্দ বৃদ্ধি : এই শিক্ষা নীতির অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল পরীক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার সাধন করা। সেই উদ্দেশ্যে শিক্ষা ব্যবস্থাকে নির্ভরযোগ্য করার কথা বলা হয়। শিক্ষাক্ষেত্রে বরাদ্দের পরিমাণ স্থিরীকৃত হয়েছে জাতীয় আয়ের ৬ শতাংশ। 

(৮) অতীতের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান : অতীতে বাধার সম্মুখীন হয়েছিল এমন কতকগুলি ধারণাকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান। যেমন— কতকগুলি কলেজকে স্বায়ত্তশাসন প্রদান, শিক্ষা-প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ, শিক্ষা-সুযোগের সমতা বিধান, বিদ্যালয় জোট সংগঠন ইত্যাদি। 

সুতরাং দেখা যাচ্ছে ওই সময়ের আর্থসামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় শিক্ষানীতি, ১৯৮৬-এর গুরুত্ব অপরিসীম।

অপচয় ও অনুন্নয়ন বলতে কী বোঝো? শিক্ষায় সমসুযোগের বৃদ্ধি করা, জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি করা ও জাতীয় সংহতি রক্ষায় কোঠারি কমিশনের সুপারিশগুলি আলোচনা করাে।


কোঠারি কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে যে জাতীয় শিক্ষানীতির ১৭ দফা বিষয়ে ঘোষণা করা হয়, তার মধ্যে যে-কোন চারটি বিষয় পর্যালোচনা করো।


১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় শিক্ষানীতির পশ্চাৎপট উল্লেখ করাে। উক্ত শিক্ষানীতির মূল বিচার্য বিষয় গুলো আলােচনা করাে।