শ্রেণিকক্ষে আচরণগত সমস্যা প্রতিকারের জন্য সাধারণ কিছু কৌশলের উল্লেখ করো।

শ্রেণিকক্ষে যে সকল আচরণগত সমস্যা দেখা যায় সেগুলো নিবারণের জন্য শিক্ষক সাধারণভাবে কিছু নিয়মনীতি, কৌশল অবলম্বন করতে পারেন।

শ্রেণিকক্ষে আচরণগত সমস্যা প্রতিকার

(১) সংকেত মাধ্যম: শিক্ষক যদি সবসময় মুখে উচ্চারণ করার বদলে সংকেত ব্যবহার করেন তাহলে এর প্রতিকার করা সম্ভব হয়। যেমন— হাতের ইশারায় বসতে বলা, ঠোটে আঙুল দিয়ে চুপ করতে বলা ইত্যাদি।

(২) শিক্ষকের সক্রিয়তা : শিক্ষক পড়ানোর সময় যদি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে বা বসে না থেকে পায়চারী করতে করতে নির্দেশনা দেন, তাহলে দুষ্টুমি করার সুযোগ কম থাকে।

(৩) দৃঢ়ভাবে নিষেধ করা : খুব সাধারণ কণ্ঠস্বরে না বলে দৃঢ়ভাবে নিষেধ করলে শিক্ষার্থীরা চুপ করে যায়।

(৪) বিশৃঙ্খলাকে গুরুত্ব না দেওয়া : শিক্ষার্থীরা খুব বেশি নালিশ করে, সেগুলিকে গুরুত্ব দেওয়া সবসময় ঠিক নয়। অথবা পাঠ চলাকালীন কোন শিক্ষার্থীর খারাপ আচরণ দেখলে সেগুলো উপেক্ষা করাই উচিত। বেশি বকাবকি করলে খারাপ আচরণের মাত্রা বেড়ে যায়। অনেকসময় অনেক অশান্ত শিক্ষার্থীর কাছে শিক্ষক-শিক্ষিকা উপস্থিত হলে শিক্ষার্থী শান্ত হয়ে যায়।

(৫) বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ার আগেই নিবারণ করা : বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই শিক্ষককে তা অবদমিত করতে হবে।

(৬) ভালো কাজে উৎসাহ প্রদান : ভালো আচরণ ও পারদর্শিতার জন্য শিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করা দরকার। সকলের সামনে তাকে প্রশংসা সূচক শব্দ ব্যবহার করতে হবে, যাতে অন্য শিক্ষার্থীরা এই কাজ করতে উৎসাহী হয়। অনেক সময় গল্প সহকারে বিভিন্ন উপদেশ দানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় উৎসাহিত করতে হবে।

(৭) ইতিবাচক মন্তব্য : শিক্ষকের ইতিবাচক মন্তব্য, শিক্ষার্থীকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে। তাই মাঝারি মানের শিক্ষার্থীরাও একটু ভালো কাজ ও আচরণ করলে তার প্রশংসা করা প্রয়োজন।

(৮) কর্তৃত্বের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে আদেশ : কর্তৃত্বের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের স্পষ্ট ভাষায় আদেশ করলে শিক্ষার্থীরা ভয় পেয়ে খারাপ আচরণ থামিয়ে দেয়।

(৯) পঠনপাঠন আকর্ষণীয় করা : শিক্ষণ পদ্ধতি আকর্ষণীয় করতে হবে। বিভিন্ন শিক্ষা সহায়ক উপকরণ সহযোগে পাঠদান করলে শিক্ষার্থীদের মনোযোগী হয়।

(১০) প্রতিটি শিক্ষার্থীকে চেনা : প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রতি শিক্ষক ভালোভাবে দৃষ্টি দিবেন। সকলকে ভালোভাবে চেনা প্রয়োজন। এটা কি কি আচরণ করতে পারে, তা শিক্ষকের জানা থাকলে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।

(১১) বিদ্যালয়ে করণীয় বিষয় গুলোর প্রতি সচেতন করা : বিদ্যালয়ের তথা শ্রেণিকক্ষের নিয়ম নীতি সম্পর্কে আমাদের সচেতন করা প্রয়োজন। কোন কাজগুলো করা যায়, আর কোন কাজগুলো করলে, তার খারাপ ফল কী হতে পারে সে সম্পর্কে নির্দেশ দেওয়া।

(১২) ব্যবহারিক কাজে উৎসাহিত করা : সবসময় তাত্ত্বিক জ্ঞান ধানের পরিবর্তে যদি মাঝে মাঝে শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে কিছু কাজ করতে দেওয়া যায় তাহলে বিষয়ে আগ্রহী বেশি হয়।

তবে শুধুমাত্র এই সকল কৌশল অবলম্বন করেই শ্রেণিকক্ষে আচরণ সমস্যার প্রতিকার করা যাবে না। তার জন্য শিক্ষকদের কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। এক্ষেত্রে কঠোর শাস্তি, অপমান, অযথা বিতর্ক, অসহিষ্ণুতা থেকে বিরত থাকতে হবে। সততা, ন্যায়বিচার ও সমবেদনা থাকতে হবে।

শ্রেণিকক্ষে সমস্যামূলক আচরণ বা অন্যকে উৎপীড়নমূলক আচরণের কারণ অথবা বদমেজাজের কারণগুলি লেখাে। এগুলির প্রতিকারের উপায়গুলি লেখাে।


শিক্ষার্থীর আচরণগত সমস্যার প্রতিকারে পিতা-মাতার ভূমিকা উল্লেখ করো।


শিক্ষার্থীর আচরণগত সমস্যা সমাধানে পরামর্শদাতার ভূমিকা লেখো।