প্রাথমিক শিক্ষার সমস্যা গুলো আলােচনা করাে।

প্রাথমিক শিক্ষার সমস্যাসমূহ

ভারতীয় সংবিধানে প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক ও সম্প্রসারিত করার প্রতি নির্দেশ থাকলেও আজও প্রাথমিক শিক্ষা সর্বজনীন ভাবে বিস্তার লাভ করতে পারেনি। এর কারণ, এই শিক্ষায় বেশ কিছু ত্রূটি রয়েছে। এই ত্রূটি বা সমস্যাগুলি নিম্নে উল্লেখ করা হল一

(১) জনসংখ্যা বৃদ্ধি : বর্তমান ভারতে কিভাবে দ্রুত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেই বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে না। ফলে প্রাথমিক শিক্ষার প্রসার ও উৎকর্ষতার ক্ষেত্রে নানান বাধার সৃষ্টি হচ্ছে।

(২) আর্থিক সমস্যা : প্রাথমিক শিক্ষা প্রসারের পথে একটি অন্যতম বড়াে বাধা হল আর্থিক সমস্যা। ভারতে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য যে পরিমাণ অর্থাৎ রয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেকটাই কম।

(৩) পরিকাঠামোগত সমস্যার : প্রাথমিক শিক্ষার পরিকাঠামোগত ও পদ্ধতিগত কিছু সমস্যা রয়েছে। যেমন- ত্রূটিপূর্ণ পাঠক্রম, অস্বাস্থ্যকর বিদ্যালয় পরিবেশ, শ্রেণিকক্ষের অভাব, শিক্ষা উপকরণের অভাব ইত্যাদি বিষয়গুলি প্রাথমিক শিক্ষাকে ব্যাহত করছে।

(৪) অভিভাবকদের দারিদ্র্য : পিতামাতার দারিদ্র্য প্রাথমিক শিক্ষার প্রসারে সবচেয়ে বড় বাধা। দারিদ্র পিতামাতার কাছে শিক্ষা থেকে কাজ করে দুটো পয়সা উপায় বড়াে কথা। শিক্ষালাভ তাদের কাছে বিলাসিতা মাত্র। তাই তারা ছেলেমেয়েদের কলকারখানায়, চায়ের দোকানে, লোকের বাড়ি কাজ করতে পাঠিয়ে দেয়।

(৫) সামাজিক সমস্যা : আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষই নিরক্ষর। এই নিরক্ষর পিতা-মাতারা শিক্ষা সম্পর্কে একদমই সচেতন নয়; সামাজিক কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস, উদাসীনতা এই সমস্যাকে তাই আরও বাড়িয়ে তুলছে।

(৬) শিশুশ্রমিক আইনের ব্যর্থতা : আমাদের দেশে অসংখ্য মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করতে, হলে কিছু অভিভাবক তাদের ছেলে মেয়েদের বিদ্যালয়ে না পাঠিয়ে উপার্জন করতে পাঠায়। সরকার এই শিশু শ্রমিকের শ্রম বন্ধ করার জন্য কিভাবে এখনও আইন প্রবর্তন না করায় এটি প্রাথমিক শিক্ষার একটি অন্যতম সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে।

(৭) অপচয় ও অনুন্নয়ন : প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রগতির আর-একটি প্রধান বাধা হলো অপচয়অনুত্তীর্ণতা। এই অপচয় বলতে বোঝায় যে সকল শিশু বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও শিক্ষা সমাপ্তির আগেই বিদ্যালয় ছেড়ে দেয় এবং অনুন্নয়ন বলতে বােঝায় একই শ্রেণিতে বারবার করে উত্তীর্ণ না হওয়া। দুটিতেই শিক্ষার্থীরা মাঝপথে পড়াশোনা বন্ধ করে দেয়।

(৮) উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের অভাব : আমাদের দেশে এখনও এমন অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে, যেখানে প্রয়োজন অনুযায়ী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের অভাব রয়েছে। 

(৯) অনুপযুক্ত ও গুরুভার পাঠক্রম : প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রম অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তবের সঙ্গে সম্পর্কহীন, আবার এই স্তরের পাঠক্রম মূলত তত্ত্ব নির্ভর, যা শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করে তোলে, ফলে প্রাথমিক শিক্ষার প্রসার ব্যাহত হয়।

(১০) ত্রূটিপূর্ণ পরীক্ষণ ব্যবস্থা : প্রাথমিক শিক্ষায় পরীক্ষণ পদ্ধতিও যথেষ্ট ত্রূটিপূর্ণ, যা এই শিক্ষা প্রসারের বড় বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। 

(১১) ত্রূটিপূর্ণ মূল্যায়ন ব্যবস্থা : প্রাথমিক শিক্ষার উপযুক্ত মূল্যায়ন না হওয়ায় এই শিক্ষাব্যবস্থা ত্রূটিপূর্ণ। গতানুগতিক পরীক্ষা পদ্ধতি প্রাথমিক শিক্ষা প্রসারে বড়াে বাধা।

(১২) বিদ্যালয় পরিদর্শনের অভাব : সবশেষে, এই বিদ্যালয়গুলিতে নিয়মিত পরিদর্শনের অভাব রয়েছে, যার ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির সমস্যাগুলি সঠিকভাবে দূর করা যাচ্ছে না।

সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, প্রাথমিক শিক্ষার সমস্যাগুলির সমাধান ঘটাতে হলে সরকারকে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে এবং সচেতন হতে হবে।

কোঠারি কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য, সাংগঠনিক কাঠামাে এবং পাঠক্রম সম্পর্কে আলােচনা করো।


কোঠারি কমিশনের সুপারিশ অনুসারে প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রম বিষয় আলোচনা করো।


প্রাথমিক শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলো কি কি ভাগে ভাগ করা যায়? ওই স্তরের শিক্ষা সম্পর্কে কোঠারি কমিশনের সুপারিশসমূহ ব্যক্ত করো।