উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে আলােচনা করাে।

বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত আলােচনা

উচ্চশিক্ষার প্রথম স্তরে কলেজ বা মহাবিদ্যালয় এবং দ্বিতীয় স্তরে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দ উডের ডেসপ্যাচকে প্রথম আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা, মাদ্রাজ ও বােম্বাই-এ তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। প্রথম দিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরীক্ষা গ্রহণ সংস্থা (Examining body) হিসেবে গড়ে উঠেছিল। কিন্তু বর্তমানে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠনের ব্যবস্থা করা হয় এবং গবেষণামূলক কাজ হয়। এই স্তরের শিক্ষাকে স্নাতকোত্তর স্তরের শিক্ষা বলে।

(A) সময়কাল ও শিক্ষার্থীর বয়সসীমা : বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গ্রহণের সময়কাল ২ বছর ব্যাপী। প্রথম বর্ষ এবং দ্বিতীয় বর্ষবা ফাইনাল ইয়ার। স্নাতকোত্তর স্তরের শিক্ষাকালের জন্য নির্ধারিত বয়সসীমা হল ২১+ থেকে ২৩ বছর পর্যন্ত।

(B) বিষয়ভিত্তিক বিভাগ: এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা, যারা কলা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত, তারা বাংলা সাহিত্য, ইতিহাস, ভূগােল, সংস্কৃত, দর্শন শিক্ষাবিজ্ঞান, পুষ্টিবিজ্ঞান, ইংরেজি প্রভৃতি বিষয় নিয়ে বিশেষ পারদর্শিতা অর্জনে নিযুক্ত হয়। যারা বা যে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান বিভাগীয়, তাদের জন্য রয়েছে— গণিত, জীববিজ্ঞান, জীবনবিজ্ঞান, ভৌতবিজ্ঞান, রসায়নবিদ্যা, পদার্থবিদ্যা প্রভৃতি বিষয়। এ ছাড়া নাচ, গান, নাটক, অঙ্কন প্রভৃতি ক্ষেত্রে উচ্চতর পারদর্শিতা লাভের জন্য এই সকলপ্রকার বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত।

(C) গবেষণামূলক বিষয়: স্নাতকোত্তর স্তরে শিক্ষার গবেষণার ব্যবস্থা আছে। এগুলির মধ্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, কিছু সম্পূর্ণভাবে রাজ্য সরকার, কিছু কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা পরিচালিত। কিছু যৌথভাবে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার দ্বারা পরিচালিত। শিক্ষক-শিক্ষণ সংক্রান্ত মহাবিদ্যালয় গুলিতে (B Ed College) এই প্রতিষ্ঠানের অন্তর্গত।

(D) বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ধরন: বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে নিয়ন্ত্রণ ও সাংগঠনিক কাঠামোর ভেদে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। সাধারণত সাংগঠনিক ও পরিচালনার দিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে যেভাবে ভাগ করা যায়, সেটি হল —

[1] সাংগঠনিক দিক থেকে: (a) অনুমোদনকারী বিশ্ববিদ্যালয়। (Affiliating University), (b) একক বিশ্ববিদ্যালয় (Unitary University), (c) যুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (Federal University)।
  • অনুমোদনকারী বিশ্ববিদ্যালয়: এগুলো সাধারণত মূল কেন্দ্রগুলো থেকে দূরবর্তী স্থানে অবস্থিত থাকে। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নির্দেশে মহাবিদ্যালয়গুলোর যাবতীয় শিক্ষামূলক কাজ পরিচালিত হয়ে থাকে। কলকাতা, বর্ধমান, বিদ্যাসাগর এই ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়।
  • একক বিশ্ববিদ্যালয়: এই বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজস্ব বিভাগ বা কলেজের মাধ্যমে পঠনপাঠনের ব্যবস্থা করে থাকে। যেমন— রবীন্দ্রভারতী, যাদবপুর ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি একক বিশ্ববিদ্যালয়।
  • যুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়: এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কার্য চলে কতগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে, যেগুলিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ হিসেবে ধরা হয়।
[2] পরিচালনাগত ভাবে: (a) কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় (Central University), (b) রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয় (State University)।
  • কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়: কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা পরিচালিত এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলি, যার সম্পূর্ণ দায়িত্ব বহন করে কেন্দ্রীয় সরকার। যেমন— জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি।
  • রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়: রাজ্য সরকার দ্বারা পরিচালিত এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলি রাজ্য দ্বারা পরিচালিত হলেও কেন্দ্রীয় সমস্ত নিয়মনীতি মেনে চলতে হয়।
উপরােক্ত সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় যেসকল দায়িত্ব পালন করে থাকে, সেগুলি হল—
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল শিক্ষার্থীদের সঠিক শিক্ষা প্রদান করা। 
  • বিশ্ববিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা নেওয়া। 
  • বিভিন্ন ধরনের গবেষণামূলক কাজের পরিচালনা করা। 
  • পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের ডিগ্রি বা সংশাপত্র প্রদান।
  • বিভিন্ন ধরনের সেমিনার, ওয়ার্কশপ, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আয়ােজন করা।

এ ছাড়া জীবনের সর্বক্ষেত্রে নেতৃত্বদান, প্রতিভাবান যুবগোষ্ঠীকে খুঁজে বার করা এবং শারীরিক দিক থেকে সুস্থ রেখে, মনের ক্ষমতার উন্নয়ন ঘটিয়ে এবং সঠিক আগ্রহ, মনোভাব, নৈতিক ও বৌদ্ধিক মূল্যবোধের প্রতিপালন করা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার অন্যতম কর্মসূচি।

উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পর যেসকল শিক্ষার সুযােগ রয়েছে তা আলােচনা করাে।


উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য কোঠারি কমিশনের সুপারিশগুলি কি ছিল। উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্য ও কাঠামাে সম্পর্কে কমিশনের বক্তব্য উল্লেখ করাে।


বর্তমানে প্রচলিত উচ্চ শিক্ষায় স্নাতক স্তরের প্রতিষ্ঠান গুলি  সম্পর্কে আলােচনা করাে।