মুদালিয়র কমিশনের সুপারিশগুলি তত্ত্ব এবং আদর্শগত দিক থেকে আকর্ষণীয় হলেও প্রয়ােগের দিক থেকে ত্রূটিপূর্ণ। —এরুপ বলার কারণ কী?

মুদালিয়র কমিশনের সুপারিশ গুলি ভারতীয় শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। একমুখী পাঠক্রমের পরিবর্তে বহুমুখী পাঠক্রম প্রবর্তন করার প্রচেষ্টা যে উন্নয়নশীল প্রক্রিয়া সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। প্রচলিত সাধারণধর্মী পাঠক্রম শিক্ষার্থীদের বৃত্তি অনুসরণে প্রস্তুত করার অনুপযোগী ছিল, সে বিষয়ে সকলেই একমত ছিলেন। আদর্শগত দিক থেকে সুপারিশগুলি যথেষ্ট প্রগতিশীল হলেও প্রয়োগের ক্ষেত্রে অনেক ত্রূটিপূর্ণ ছিল। যেমন— 

ত্রূটিপূর্ণতার নিদর্শন

(১) বাস্তব পরিস্থিতির বিবেচনার অভাব: কেবলমাত্র বহুমুখী পাঠক্রম শিক্ষার্থীদের বৃত্তিমূলক ক্ষেত্রের প্রস্তুত করতে সক্ষম হবে। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতির সমস্যাকে বিবেচনা না করেই পাঠক্রম প্রচলন করা হয়।

(২) বহুমুখী বিদ্যালয়ের সফলতা : বহুমুখী বিদ্যালয় গুলো অত্যন্ত ব্যয়বহুল। সরকারি অর্থসাহায্য ছাড়া এই ধরনের বিদ্যালয় পরিচালনা করা সম্ভব নয়। ফলে এই ধরনের প্রকল্প সফল হতে পারেনি।

(৩) বৃত্তিমূলক ক্ষেত্র প্রস্তুত : বহুমুখী বিদ্যালয় গুলো বৃত্তিমূলক ক্ষেত্র প্রস্তুত করার পরিবর্তে সাধারণ প্রচলিত বিদ্যালয়ের পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

(৪) শুধুমাত্র নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষা : কমিশন নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষা (Objective Test) প্রচলনের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করে। কিন্তু শুধুমাত্র নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষার দ্বারা শিক্ষার উন্নতি সম্পূর্ণ ভাবে পরিমাপ করা সম্ভব নয়।

(৫) শিক্ষাপর্ষদ সম্বন্ধীয় : মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের সংগঠন সম্পর্কে কমিশনের নির্দেশ মোটেই প্রগতিশীল ছিল না। কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদ শুধুমাত্র উপদেষ্টা সংস্থা হিসেবে কাজ করবে, তার কার্যনির্বাহী ক্ষমতা থাকবে না। রাষ্ট্র দ্বারা মাধ্যমিক শিক্ষা নিয়ন্ত্রিত হবে। এর ফলে শিক্ষা যান্ত্রিক ও বৈচিত্র্যহীন হয়ে উঠবে।

(৬) সর্বাঙ্গীন বিকাশের অভাব : মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে বিভিন্ন বিষয়ের ব্যবস্থা করে, শিক্ষার্থীর রুচি, চাহিদা, আগ্রহ ও যোগ্যতা অনুযায়ী সকলকে সুযোগ দানের মাধ্যমে সর্বাঙ্গীণ বিকাশ ঘটানো সম্ভব, বাস্তবে তা গ্রহণযোগ্য হয়নি।

(৭) মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরের সংস্কার : মাধ্যমিক শিক্ষাকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার জন্য কমিশন ও শিক্ষার স্তর বিভাজন করে সংস্কার করার কথা বলেছে, তার সংস্কার পদ্ধতি সম্বন্ধে কোনো আলোচনা করেনি।

(৮) শিক্ষক-শিক্ষণ বিদ্যালয় : শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণের সুপারিশ করা হলেও যা প্রয়ােজন সেই সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষণ বিদ্যালয় স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।

(৯) অর্থাভাব : কমিশনের প্রস্তাবিত পাঠক্রম স্তরের প্রবর্তন হলে যে ব্যবস্থা বিদ্যালয়গুলিতে থাকা প্রয়োজন, তা বর্তমানে কোনো মতেই সম্ভব নয়। এতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হবে। ফলে তা বাস্তবে রূপায়িত হয়নি।

(১০) দায়িত্ব পালনে অক্ষম : শিক্ষাক্ষেত্রে স্থানীয় শিক্ষাবাের্ডগুলি এবং মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে ম্যানেজিং কমিটি গুলি যোগ্যতার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেনি।

(১১) CRC কার্যকরণের অভাব : শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক অগ্রগতির বিবরণপত্র তৈরি করার কথা বলা হলেও (CRC) বর্তমানে তা বিদ্যালয়গুলিতে কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।

(১২) গৃহশিক্ষকতা : শিক্ষকদের গৃহশিক্ষকতা নিষিদ্ধ করা হলেও বর্তমানকালে বাস্তবে তা কার্যকর সম্ভব হয়নি।

(১৩) বেতন হার : শিক্ষকদের উন্নতির জন্য বিভিন্ন সুপারিশ করা হলেও শিক্ষকদের মূল বেতনের হার সম্পর্কে কমিশন কোনো সুপারিশ করেনি।

(১৪) প্রয়োগের অভাব : কমিশনের মতামত গুলো যদি সঠিকভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হতো, তাহলে শিক্ষা ক্ষেত্রে সত্যিই পরিবর্তন আসে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে কমিশনের সুপারিশগুলো কার্যে রূপায়িত করা সম্ভব হয়নি।

উপরোক্ত ত্রূটিগুলি থাকা সত্ত্বেও বলা যায়, মাধ্যমিক শিক্ষা সংক্রান্ত সুপারিশগুলি অত্যন্ত মূল্যবান। এই সুপারিশগুলোর ফলে মাধ্যমিক স্তরে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে। যা আগামী দিনে জাতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।

মুদালিয়র কমিশন মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষণ পদ্ধতি বিষয়ে যেসকল মূল্যবান সুপারিশ লিপিবদ্ধ করে, তা লেখো। নির্দেশনা ও পরামর্শদান সম্পর্কে কমিশনের সুপারিশগুলি কি কি।


মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন চরিত্র গঠনের জন্য শিক্ষা বলতে কী বুঝিয়েছে? কমিশন শিক্ষামূলক ও বৃত্তিমূলক নির্দেশনার জন্য যেসব সুপারিশ করেছে, তা লেখাে।


শিক্ষকদের জীবিকা মূলক পরিস্থিতি ও তার উন্নয়ন জন্য কমিশন যে সুপারিশ গুলি করেছে তা উল্লেখ করো এবং বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে তার মূল্যায়ন করাে।