উদাহরণ-সহ শ্রেণিকক্ষে সাধারণ আচরণগত সমস্যা কাকে বলে লেখ। এই প্রসঙ্গে শিক্ষার্থীদের সাধারণ আচরণগত সমস্যার কারণগুলো উল্লেখ করো।

শ্রেণিকক্ষে সাধারণ আচরণগত সমস্যা

মানুষ মাত্রই তার কতগুলি মৌলিক চাহিদা বর্তমান। এই চাহিদা পূরণ দুটি উপায়ে সম্ভব। একটি সমাজ-সমর্থিত উপায়, অন্যটি সমাজ অবাঞ্ছিত উপায়। সে যখন তার চাহিদাগুলি সমাজ-সমর্থিত পথে পূরণ করার চেষ্টা করে তখন তার আচরণগুলিকে স্বাভাবিক আচরণ বলে ধরা হয়। অন্যদিকে চাহিদা পূরণের জন্য সে যখন অবাঞ্ছিত উপায় অবলম্বন করে অর্থাৎ যে আচরণগুলো সমাজ স্বীকৃত নয়—এই ধরনের আচরণের মাধ্যমে লক্ষ্য পূরণের চেষ্টা করলে তাকে বলা হয় সমস্যামূলক আচরণ। যেমন—শ্রেণিকক্ষে কিছু শিক্ষার্থী আছে যারা খারাপ আচরণ করে বা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে সহপাঠীদের ও শিক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করে। ক্লাসে বিশৃঙ্খল আচরণ করা হল—একটি আচরণগত সমস্যার উদাহরণ।

শিক্ষার্থীদের সাধারণ আচরণগত সমস্যার কারণ

শিক্ষার্থী যখন সমাজের অবাঞ্ছিত পথে তার লক্ষ্যপূরণ করার চেষ্টা। করে তখন তার আচরণ গুলি সমস্যামূলক হয়ে দাঁড়ায়। আচরণগত সমস্যার কয়েকটি উদাহরণ হল— বদমেজাজ, পলায়ন প্রবণতা, মারধর করা, চুরি করা, মিথ্যা কথা বলা ইত্যাদি। এই আচরণগত সমস্যার প্রধান কারণগুলি হল—

(১) ব্যক্তিগত এবং সামাজিক চাহিদা পূরণের অভাব: শিশুর যে-সমস্ত ব্যক্তিগত এবং সামাজিক চাহিদাগুলি বর্তমান সেগুলি যথাযথ উপায়ে পূরণ না হলে সে তখন অবাঞ্ছিত পথ অবলম্বন করে সেগুলো পূরণ করার চেষ্টা করে। যেমন— শিশুর একটি মৌলিক চাহিদা হল খাদ্যের চাহিদা। কিন্তু এটি পূরণ না হলে সে তখন হয়তাে দোকান থেকে চুরি করে খাবার খায়। এইভাবে সে তার খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে।

(২) বাড়ির পরিবেশ: বাড়ির কিছু খারাপ ঘটনা শিক্ষার্থীর আচরণগত সমস্যার কারণ হয়ে দাড়ায়। যেমন- বাড়িতে কোনাে আকস্মিক দুর্ঘটনা বা মৃত্যু, মা-বাবার মধ্যে বিবাদ, মা-বাবার পৃথক বাড়িতে থাকা ইত্যাদি ঘটনাগুলি শিশুর মনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। এর ফলে শিশু নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। এ ছাড়া বাড়ির সদস্যদের শিশুকে সঙ্গ না দেওয়া, খারাপ আচরণ বা অত্যধিক শাসন করা ইত্যাদি থেকে শিশুর মধ্যে আচরণগত সমস্যার সৃষ্টি হয়।

(৩) অপসংস্কৃতি: বর্তমানে দূরদর্শন, চলচ্চিত্র, বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যম—গুলো মাধ্যমে যে-সমস্ত বিকৃত রুচিসম্পন্ন সংস্কৃতি ও খারাপ হিংসাত্মক ঘটনা দেখানো হয়, তা ব্যাপকভাবে শিক্ষার্থীদের আচরণ নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

(৪) শিক্ষকের আচরণ : শিক্ষকের আচরণ অনেক সময় শিশুর অবাঞ্ছিত আচরণের কারণ হয়ে দাড়ায়। অনেক শিক্ষক আছেন, যারা ক্লাসে উপস্থিত থাকলে শিক্ষার্থীরা খারাপ আচরণ করতেই পারে না। আবার এমন অনেক শিক্ষক আছেন, যারা ক্লাসে কটুকথা বলুন বা শিক্ষার্থীদের প্রতি অপমানজনক ভাষা ব্যবহার করেন, ফলে শিক্ষার্থীদের সুযোগ পেলে শ্রেণিকক্ষে সমস্যার সৃষ্টি করে। শিক্ষকের শিক্ষণ পদ্ধতি যদি একঘেয়েমি হয়, শিক্ষক একাই বলতে থাকেন, শিক্ষার্থীকে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায় না, সেক্ষেত্রে শ্রেণিকক্ষে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

(৫) শ্রেণিকক্ষের অবস্থা : শ্রেণিকক্ষের অবস্থা বলতে এখানে শ্রেণিকক্ষের আকার, ছাত্র সংখ্যা বোঝানো হয়েছে। শ্রেণিকক্ষের আকার বা মাপ অনুযায়ী ছাত্রসংখ্যা হলে অসুবিধা হয় না। কিন্তু ঘরের মাপ অনুযায়ী ছাত্রসংখ্যা বেশি হলে শিক্ষার্থীরা বিশৃঙ্খল আচরণ করার সুযোগ পেয়ে যায়। তা ছাড়া একটি ক্লাসে ছাত্রসংখ্যা অত্যধিক হলে শিক্ষক সবার প্রতি সমান ভাবে নজর দিতে পারেন না। সেক্ষেত্রে পড়ানোর সময় অনেক শিক্ষার্থী বিশৃঙ্খল আচরণ করে।

(৬) বিভিন্ন ধরনের সামাজিক পরিবেশ থেকে আগত শিক্ষার্থী : একটি বিদ্যালয়ের বিভিন্ন আর্থ সামাজিক পরিবেশ থেকে শিক্ষার্থীরা আসে। ফলে প্রত্যেকের চিন্তাভাবনা, সংস্কৃতি পৃথক। আবার অনেক খারাপ পরিবেশ থেকে শিশুরা এলে তাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণ মানসিকতা কাজ করে। এইসকল কারণে শ্রেণিকক্ষে আচরণগত সমস্যা দেখা যায়।

(৭) গণমাধ্যমের বিরূপ প্রভাব : বিভিন্ন ধরনের গণমাধ্যম যেমন— টিভি, সিনেমা ইত্যাদি দেখার মাধ্যমে তারা ভালো, খারাপ দুটি দেখে। খারাপ প্রভাবে তাদের মধ্যে হিংসা, বদমেজাজ, অনৈতিকতা ইত্যাদির বিকাশ ঘটে।

উল্লিখিত যে দিকগুলো উল্লেখ করা হল এগুলো ছাড়াও আরোও অন্যান্য কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাধারণ আচরণগত সমস্যা দেখা যায়। তাই এই সকল সমস্যা সমাধানের জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকা, পিতা-মাতা সকলকে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।