মডেল স্কুল ও স্বশাসিত কলেজ সম্পর্কে লেখাে।

মডেল স্কুল

জাতীয় শিক্ষানীতিতে মাধ্যমিক শিক্ষার শিক্ষালয়ের সংখ্যাবৃদ্ধি অপেক্ষা গুণগত মান বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন অংশে আদর্শ বা নবোদয় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা হয়।

বিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য: দেশের অত্যন্ত মেধাসম্পন্ন শিশুদের উন্নতমানের মাধ্যমিক শিক্ষায় সুযোগ সুবিধা দান।

মোট বিদ্যালয়ের সংখ্যা : কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনা অনুসারে সারা ভারতে মােট ৪৩২টি জেলায় একটি করে আদর্শ বা মডেল স্কুল প্রতিষ্ঠিত হবে।

মডেল স্কুলের বৈশিষ্ট্য

নবোদয় বিদ্যালয়ের বৈশিষ্ট্য— 

(১) ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণী : এই বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হবে বলে স্থির করা হয়।

(২) ভর্তি পরীক্ষা ব্যবস্থা : নবোদয় বিদ্যালয়ে ভরতির জন্য প্রবেশিকা পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকবে। পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে উন্নত মেধাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা ভরতির সুযােগ পাবে। প্রতি ব্লকে এই পরীক্ষা হবে।

(৩) আবাসিক ও অবৈতনিক : এই বিদ্যালয় গুলো হবে আবাসিক ও অবৈতনিক। শিক্ষার সমস্ত ব্যয়ভার সরকার বহন করবে। এ ছাড়া পোশাক-পরিচ্ছদ ও খাওয়ার খরচ সরকার থেকে দেওয়া হবে।

(৪) আসন সংরক্ষিত : শহরের ছেলে মেয়েদের ২০ শতাংশের বেশি এই বিদ্যালয়ে ভর্তি করা যাবে না। মেয়েদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে। অনুন্নত জাতি, উপজাতির ছেলেমেয়েদের জন্যও আসন সংরক্ষিত থাকবে। যে জেলায় অনুন্নত সম্প্রদায়ের সংখ্যা বেশি, সেখানে সেই হারে আসন সংরক্ষণ করা হবে। 

(৫) ভাষা শিখন : প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তিনটি ভাষা শিখতে হবে। যথা— (a) আঞ্চলিক বা মাতৃভাষা, (b) হিন্দি এবং ইংরেজি। 

(৬) শিক্ষার্থীর ম্থানান্তরকরণ : প্রতি বিদ্যালয় থেকে অষ্টম অথবা নবম শ্রেণির ২০% থেকে ৩০% শিক্ষার্থী অন্য ভাষাভাষী রাজ্যে নিয়ে যাওয়া হবে। বাংলা থেকে কোনাে ছাত্রকে হিন্দি ভাষাভাষী রাজ্যে নিয়ে যাওয়া হলে তাকে হিন্দি, ইংরেজি ও বাংলা পড়তে হবে। অন্যদিকে হিন্দিভাষী অঞ্চল থেকে বাংলায় নিয়ে যাওয়া হলে, সেই শিক্ষার্থীকেও বাংলা পড়তে হবে। 

(৭) পাঠক্রম : নবোদয় বিদ্যালয়ের পাঠক্রমে থাকবে—কলা, বিজ্ঞান, অঙ্ক, সমাজবিদ্যা, শারীরশিক্ষা, উৎপাদনাত্মক কাজ ইত্যাদি।

(৮) শিক্ষা উপকরণের ব্যবস্থা : শিক্ষণ পদ্ধতির মান উন্নয়নের জন্য আধুনিক শিক্ষা সহায়ক উপকরণের ব্যবস্থা থাকবে। চক, ডাস্টার, চার্ট, মডেল, মানচিত্র ছাড়া থাকবে টিভি, রেডিয়ানে, টেপরেকর্ডার, কম্পিউটার ইত্যাদি।

(৯) শিক্ষক নিয়োগ : এই বিদ্যালয়ে সর্বভারতীয় ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।

(১০) শিক্ষণ পদ্ধতি : আধুনিক উপকরণ সহযোগে ছাত্রদের পড়ানো হবে। বক্তিতার পরিবর্তে বেশি করে আলোচনা পদ্ধতির উপর জোর দিতে হবে।

(১১) মূল্যায়ন ব্যবস্থা : এই বিদ্যালয়ে সারা বছর ধরে ধারাবাহিক মূল্যায়নের ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হয়েছে।

(১২) পরিচালন ব্যবস্থা : স্কুলগুলি কেন্দ্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড (CBSE) দ্বারা পরিচালিত হবে। এজন্য একটি নতুন বোর্ড স্থাপনের কথা বলা হয়েছে।

(১৩) শিক্ষা পদ্ধতি আবিষ্কার এবং প্রয়োগ : এই বিদ্যালয়ে উন্নত ধরনের শিক্ষণ পদ্ধতি আবিষ্কার এবং তার প্রয়োগের সুযোগ থাকবে।

(১৪) শিক্ষার মাধ্যম : নবম শ্রেণি থেকে শিক্ষার মাধ্যম হবে হিন্দি অথবা ইংরেজি।

(১৫) ধারাবাহিক মূল্যায়ন : এই বিদ্যালয়ে সারা বছর ধরে মূল্যায়নের ব্যবস্থা থাকবে।

(১৬) নবোদয় বিদ্যালয়ের সংখ্যা : কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনা অনুসারে, সারা ভারতে মােট ৪৩২ টি জেলায় একটি করে নবোদয় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হবে। 

তবে নবোদয় বিদ্যালয় কর্মসূচি রূপায়ণের আরও গতি আনতে হবে। বর্তমানে বিশ্বায়নের যুগে আরও আধুনিকীকরণের প্রয়ােজন আছে।

স্বশাসিত কলেজ

জাতীয় শিক্ষানীতি ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে বলা হয়েছে যে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও রাজ্য সরকার সহমত হয়ে বিভিন্ন কলেজকে Excellent College (উৎকর্ষ মহাবিদ্যালয়) বা Autonomous College (স্বশাসিত মহাবিদ্যালয়)-এর স্বীকৃতি দেবে। 

(১) মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিষ্ঠিত উল্লিখিত মহাবিদ্যালয় গুলো স্বাধীনভাবে পাঠক্রম রচনা, ভর্তির নীতি নির্ধারণ, পরীক্ষা গ্রহণ প্রভৃতি করতে পারবে। 

(২) স্বশাসিত কলেজ গুলো প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট থাকবে। ওইসব কলেজকে পাঁচ বছরের জন্য স্বশাসনের দায়িত্ব দেওয়া হবে।

(৩) স্বশাসিত কলেজ গুলো নিজেরাই তাদের সিলেবাস ও পাঠ্যসূচি, পাঠক্রম, অভিজ্ঞানপত্র ইত্যাদি তৈরি করবেন এবং নির্দিষ্ট সময় মতো ছাত্রদের পরীক্ষা নেবে। 

(৪) শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাতীয় সংহতি বৃদ্ধির জন্য স্বশাসিত কলেজ গঠিত হবে।

(৫) ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ৫০০ স্বশাসিত কলেজ গঠিত হবে বলে স্থির করা হয়।

জাতীয় শিক্ষানীতি (১৯৮৬ খ্রিঃ.)-তে উল্লেখিত অর্থপূর্ণ অংশীদারিত্ব, সম্পর্কে আলোচনা করো।


মাধ্যমিক শিক্ষার বৃত্তিমুখী করণ এবং কারিগরি ও ব্যবস্থাপনা শিক্ষা প্রসঙ্গে জাতীয় শিক্ষানীতির বক্তব্য উল্লেখ করো।


উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষানীতি (১৯৮৬ খ্রি.)-তে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় | উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ১৯৮৬ ও ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের সুপারিশ গুলি কী কী ছিল?