কম্পিউটার প্রযুক্তির বিকাশের ধারা আলােচনা করাে।

কম্পিউটার প্রযুক্তির বিকাশের ধারা

কম্পিউটার প্রযুক্তির বিকাশের ধারা অনুশীলন করতে গিয়ে প্রযুক্তিবিদদের কাছে কম্পিউটারের উৎকর্যতা বিভিন্ন যুগে বিভিন্নভাবে ধরা পড়েছে। অর্থাৎ বিভিন্ন পর্যায়ে কম্পিউটারের বিবিধ ধারা লক্ষ করা গেছে। এই পর্যায়গুলিকে বলে জেনারেশন। নীচে বিভিন্ন জেনারেশন বিষয়ে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলㅡ

প্রথম জেনারেশন (১৯৪২-১৯৫৫ খ্রি.): চার্লস ব্যাবেজের ধারণার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা প্রথম স্বয়ংসম্পূর্ণ যন্ত্রগণকটির নাম হল MARK-I কম্পিউটার। এটি আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানী হাওয়ার্ড আইকেন (Howard Aiken), ENIAC আবিষ্কার করেন জন মেকলে (John Mauchly), এবং জে পি একাট (JP Eckart)।

বৈশিষ্ট্য :
  • প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার গুলি ছিল সরল।
  • আকারে ছিল বৃহৎ।
  • ভ্যাকুয়াম টিউব ব্যবহারের জন্য যন্ত্রগুলি থেকে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হত। এ কারণে যন্ত্রগুলিকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে রাখতে হত। যেমন-  ENIAC, UNIVAC, MARK-I ইত্যাদি মেশিন।
দ্বিতীয় জেনারেশন (১৯৫৬-১৯৬৫ খ্রি.) : ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে ট্রানজিস্টর আবিষ্কৃত হয়। উইলিয়ম শোলে (William Shockley), ওয়াল্টার ব্রাটেন (Walter Brattain) ও জন বারডিন (John Bardin) ট্রানজিস্টার আবিষ্কার করেন। এর ফলে প্রথম জেনারেশনে যে কম্পিউটারের মধ্যে বায়ুশূন্য নল ব্যবহারের প্রচলন ছিল তার পরিবর্তে ট্রানজিস্টার ব্যবহৃত হতে থাকে।

বৈশিষ্ট্য :
  • প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারের তুলনায় আকারে ছােটো। 
  • প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারের তুলনায় কম তাপ উৎপাদনক্ষম। 
  • ট্রানজিস্টর যন্ত্রটি ভ্যাকুয়াম টিউবের তুলনায় আকারে ছােটো। যেমন IBM-1401, IBM-7000 ইত্যাদি মেশিন।
তৃতীয় জেনারেশন (১৯৬৬-১৯৭৫ থ্রি.) : তৃতীয় জেনারেশন কম্পিউটারে আরও একধাপ উন্নতি নিশ্চিত হয়। IC বা ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট আবিষ্কৃত হয়। ফলে কম্পিউটার তার উন্নয়নের পথে আরও একধাপ অগ্রসর হয়।

বৈশিষ্ট্য :
  • এর বিদ্যুৎ গ্রহণ ক্ষমতা আরও কম এবং গতিশীল। 
  • তথ্য ইনপুট করতে কি-বোর্ড ও মাউস ব্যবহৃত হয়। 
  • এর সঞ্চয় ক্ষমতা আগের জেনারেশনগুলির তুলনায় বেশি। 
  • তবে গঠন জটিল হওয়ায় অসুবিধা সৃষ্টি করে।
  • এই কম্পিউটার গুলোর কার্যকারিতা নির্ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যেমন— IBM-360, ICL 2900, CDC 1700 ইত্যাদি মেশিন।
চতুর্থ জেনারেশন (১৯৭৬-১৯৮৫ খ্রি.) : চতুর্থ জেনারেশনে একটিমাত্র IC চিপ (Chip) ব্যবহার করে ক্ষুদ্র আকারের কম্পিউটার তৈরি করা হয়। এই যন্ত্র ২২৫০ ট্রানজিস্টর যুক্ত স্বয়ংসম্পূর্ণ বর্তনী বা মাইক্রো প্রসেসর যুক্ত ছিল। এই যন্ত্র গাণিতিক দুটি CPU সীমাবদ্ধ ছিল।

বৈশিষ্ট্য :
  • এই প্রজন্মে IC-র চাপের পরিবর্তে LSIC (Large Scale Integrated Circuit) ব্যবহৃত হত, পরবর্তীকালে VLSI (Very Large Scale Integrated Circuit) চিস ব্যবহার হতো। 
  • কম্পিউটার গঠন আরও জটিল হয়। 
  • মনিটর, প্রিন্টার, প্লটারের ব্যবহার শুরু হয়। যেমন DEC-10, STAR-1000, IBM-4341 ইত্যাদি মেশিন।
পঞ্চম জেনারেশন (১৯৮৬-আজ পর্যন্ত) : পঞ্চম প্রজন্মে আরও উন্নত মাইক্রোপ্রসেসর আবিষ্কৃত হওয়ার ফলে কম্পিউটারের ব্যাপ্তি বহুগুণ বেড়ে যায়। এই পর্যায়ে কৃত্রিম বুদ্ধি সংযােজিত হয়। এরা শিখতে পারে, যুক্তি নির্মাণ করতে পারে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। 

বৈশিষ্ট্য :
  • পঞ্চম যোজনায় কম্পিউটার বহু কাজ একসঙ্গে করতে পারে। 
  • আগের চার প্রজন্মের থেকে দাম সস্তা।
  • পঞ্ম জেনারেশনে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ হল আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) এবং নলেজ ইনফরমেশন প্রসেস সিস্টেম যুক্ত (KIPS)I
সুতরাং উপরােক্ত বিকাশের ধারা অনুশীলন করলে কোনাে শিক্ষার্থী কম্পিউটার সম্পর্কে সহজে ধারণা গঠন করতে পারে।