শিক্ষার গুণগত মানােন্নয়নে কম্পিউটারের ভূমিকা, কম্পিউটারের শিক্ষামূলক উপযোগিতা, শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটারের অবদান | কম্পিউটারের শিক্ষামূলক ব্যবহার, শিক্ষার্থীদের বহুমুখী চাহিদা পূরণে কম্পিউটারের ভূমিকা

শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটার

চার্লস ব্যাবেজ আবিষ্কৃত কম্পিউটার বর্তমানে শিক্ষার নানা ক্ষেত্রকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করছে। পৃথিবীর বহু উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে কম্পিউটার শিক্ষা ও শিখনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। কম্পিউটারের শিক্ষামূলক ব্যবহারগুলি হলㅡ

[1] শ্রেণিক্ষে বিষয়বস্তু উপস্থাপনে সুবিধা: শ্রেণিকক্ষে সাধারণ পদ্ধতিতে বিষয়বস্তু উপস্থাপনের সময় শিক্ষক বিভিন্ন কারণে সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌছােতে পারে না। কিন্তু কম্পিউটারের মাধ্যমে তা সম্ভব। কম্পিউটারের মাধ্যমে বিষয়বস্তু উপস্থাপনের সুবিধাগুলি হলㅡ
  • সম্পূর্ণ বিষয়বস্তুকে একসঙ্গে উপস্থাপন করা যায়।
  • শিক্ষকের কাজের চাপ অনেক কম হয়।
  • শিক্ষার্থী তার নিজস্ব সামর্থ্য, দক্ষতা ও ক্ষমতা অনুযায়ী এগােতে পারে।
  • বিষয়বস্তু সহজভাবে উপস্থাপন করার ফলে শিক্ষার্থীরা সহজেই তা বুঝতে পারে। 
  • শিক্ষার্থীর অগ্রগতি সম্পর্কেও শিক্ষক অবগত হতে পারে।
[2] পাওয়ার পয়েন্ট : পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন (PPT) মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষামূলক বিষয় শিক্ষার্থীদের সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপনের জন্য কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়। তা ছাড়া বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা সহায়ক সফটওয়্যারের সাহায্যে বিভিন্ন বিষয় অনুশীলন করা যায়।

[3] বিবিধ ব্যবহার : কম্পিউটার শিক্ষা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে খুবই জরুরি। সেই কারণে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে MS Office এর অন্তর্গত MS Word, Excel, Powerpoint, MS Dos, ইত্যাদি প্রোগ্রামগুলি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা প্রদান করা হয় যাতে ভবিষ্যৎ জীবনে চলার পথে কম্পিউটার সংক্রান্ত শিক্ষাগুলি কাজে লাগে। এছাড়াও Logo, Paint এগুলির সম্পর্কে ধারণা প্রদান করা হয়।

[4] ভাষাশিক্ষা : কম্পিউটারের ভাষা শেখার প্রােগ্রামের নাম হল Word Processor। যার সাহায্যে শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে লিখতে ও পড়তে পারে। ভাষাশিক্ষার সুবিধা হলㅡ
  • কম্পিউটারের সাহায্যে শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে নিজের ভাব প্রকাশ করার দক্ষতা অর্জন করতে পারে। 
  • নিজেদের ভাষাগত ত্রুটি সংশােধন করতে পারে।
[5] কম্পিউটারভিত্তিক প্রশিক্ষণ : বিশেষ বিশেষ বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কম্পিউটারকে ব্যবহার করা হচ্ছে। ই-কমার্স, ই-বিজনেস, মাল্টিমিডিয়া, ইন্টারনেট, ডিটিপি ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা যাতে শিক্ষকের কাছ থেকে শিখে স্লাইড তৈরি করতে পারে, তার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

[6] তথ্য সংগ্রহ ও গবেষণার ক্ষেত্রে কম্পিউটার : বর্তমানে বিভিন্ন সিডি থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে ছাত্রছাত্রীরা তাদের জ্ঞানের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। তা ছাড়া মুহূর্তের মধ্যে ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা যায়।

[7] গণিত শিক্ষা : এটি একটি জটিল বিষয় হলেও সহজভাবে গণিত শিখনে সাহায্য করে। গণিত শিখনে কম্পিউটারের ভূমিকা হলㅡ
  • ক্লাসরুমে গণিতের বিভিন্ন জটিল সমস্যাসমাধান করতে সাহায্য করে।
  • কম্পিউটারের মাধ্যমে গণিত শিক্ষাদানে শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি মনোযোগী হয়ে ওঠে।
  • অনেক জটিল সমস্যা খুব তাড়াতাড়ি সমাধান করে।
[8] অনুশীলন মূলক : অনুশীলনের মাধ্যমেও শিক্ষার্থীর বিষয়বস্তুগত দক্ষতা বৃদ্ধি করা যায়। অনুশীলনের ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহারের সুবিধা হলㅡ
  • শিক্ষার্থী তার প্রয়ােজনমতাে বেশি সময় ধরে অনুশীলন করতে পারে।
  • শিক্ষার্থী নিজেও তার অনুশীলনের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে পারে।
[9] ব্যক্তিগত চাহিদা পূরণ : শ্রেণির প্রতিটি শিক্ষার্থী একইরকম হয় না। কোনাে শিক্ষার্থী আবার বেশি শিখতে চায় ফলে শিক্ষক সমস্যার সম্মুখীন হন। এক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যক্তিগত চাহিদা পূরণ করতে পারে।

[10] ক্ষমতা ও উৎসাহ : শিক্ষার্থীরা নিজেদের ক্ষমতা এবং উৎসাহ বা আগ্রহ অনুযায়ী কম্পিউটারকে ব্যবহার করে অগ্রসর হওয়ার সুযােগ পায়।

[11] পরিকল্পনা গ্রহণ : শিক্ষার্থীরা তাদের কাজের ফলাফল খুব দ্রুত জানতে পারে এবং কম্পিউটারকে কেন্দ্র করে পরবর্তী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে।

[12] পুনঃশিখন : পুনঃশিখনে কম্পিউটারের দায়িত্ব হলㅡ
  • অনুপস্থিত থাকলেও কম্পিউটারের মাধ্যমে তারা সহজেই পূর্বের পাঠ গ্রহণ করতে পারে।
  • পুনঃশিখনের সুযােগ পাওয়ায় শিখন অভিজ্ঞতা আরও দৃঢ় হয় এবং ভুল ধারণা দূর করা সম্ভব হয়।
[13] শ্ৰম সাশ্রয় : কম্পিউটারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি সময় ধরে একাগ্রচিত্তে অনুশীলন করতে পারে।

[14] সময় ও শ্রম : শিক্ষার্থীরা একদিকে যেমন কম্পিউটারের মাধ্যমে তাদের কাজের সময়ের পুরােটাই কাজে লাগাতে পারে, তেমনি তাদের সময় ও শ্রম সাশ্রয় হয়।

[15] সমস্যা সমাধান মূলক শিখন : সমস্যাসমাধানমূলক শিখনে কম্পিউটার ব্যবহারের সুবিধাগুলি হলㅡ
  • শিক্ষার্থীরা শিখনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে।
  • স্বাধীন চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটে।
  • সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে।
  • এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ, পারদর্শিতা সংক্রান্ত তথ্য ইত্যাদি কাজে কম্পিউটার সাহায্য করে থাকে।
সুতরাং শ্রেণি শিক্ষণ প্রক্রিয়াকে কার্যকরী ও স্বার্থক করে তুলতে কম্পিউটার বিশেষভাবে সাহায্য করে।